হাসিনার পতনের পর কলকাতার ৬০ শতাংশ বাজারের ধস: মাথা খারাপ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০২ পূর্বাহ্ন
হাসিনার পতনের পর কলকাতার ৬০ শতাংশ বাজারের ধস: মাথা খারাপ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

কলকাতা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এই পর্যটকদের অনুপস্থিতি কলকাতার অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে পোশাক, হোটেল ও চিকিৎসা খাতে।


গত একমাসে যারা কলকাতায় গেছেন, তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। শেখ হাসিনার মতো তারাও নিজেদের রক্ষা করতে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন। সাধারণ পর্যটকদের আগমন কমে যাওয়ার কারণে কলকাতার ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।


নিউ মার্কেট নামে পরিচিত এসএস হগ মার্কেট এবং তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলি সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তারা কলকাতায় বেড়াতে এসে কিংবা চিকিৎসার জন্য আসলেও নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে যেতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই বাজারের বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে। 


নিউ মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা বলেন, "পোশাকের দোকানগুলিতে বাংলাদেশি ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত। এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে এই এক মাসে।"


শুধু পোশাকের বাজারই নয়, হোটেল বুকিংও প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এই শহরে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসতেন, কিন্তু এখন সেই সংখ্যাও এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। 


কলকাতার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই সংকট সহজেই কাটবে না। শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণের ফলে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে নতুন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভারতের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, বর্তমান অন্তর্বর্তী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি এই সংকটকে আরও গভীর করছে।


কলকাতার অর্থনৈতিক মন্দা শুধু পর্যটন ও ব্যবসায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও অসন্তোষও এই সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের অতিরিক্ত প্রভাব, পানি বণ্টন এবং সীমান্ত হত্যার মতো ইস্যুগুলোতে ভারতের ভূমিকা না বদলালে কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।


এসএস হগ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এবং হোটেল মালিকরা এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। যদিও ভারতের বড় শহরগুলিতে অন্যান্য উৎস থেকে পর্যটক আসে, তবে বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রভাব অপরিসীম। তাদের অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করা সহজ হবে না।


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, তা কতদিন চলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।