কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকা থেকে ইউটিউব সেলিব্রেটি করার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে অ্যাডভোকেট জাহিদ চৌধুরী (৪১) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) র্যাব-১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানান।
র্যাব জানায়, ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা, ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে বিয়ে করার আশ্বাস, আইনের সহায়তা দেওয়ার নামে অসহায় নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে ও নারীদের ধর্ষণ করত অ্যাভোকেট জাহিদ। এমন বহু অভিযোগ জাহিদের বিরুদ্ধে। অবশেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২ জানুয়ারি নগরীর ২য় মুরাদপুর এলাকার এক নারী তার দুই সন্তান নিখোঁজ হয়েছে এমন অভিযোগ করেন র্যাব-১১ এর সিপিসি-২, কুমিল্লার কার্যালয়ে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে র্যাব। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকার একটি বাসার ৭ম তলার ভাড়াটিয়া অ্যাডভোকেট জাহিদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে এবং ওই নারীর নিখোঁজ মেয়ে (১৫), তার ছেলে (২০) এবং আরেক নারীকে (৩২) উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, পূর্ব পরিচয় সূত্রে জাহিদ চৌধুরীকে রিমা আক্তার (ছদ্ম নাম) ও তার ভাই মামা বলে ডাকত। জাহিদ নিজেকে একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং সে বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েদেরকে ইউটিউব সেলিব্রেটি করার মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে অনেক সাবলম্বী করেছে বলে জানায়। এমন প্রলোভনে রিমার মনেও ইউটিউব সেলিব্রিটি হয়ে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তার মায়ের অগোচরে তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেত। বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের শর্ট ফিল্ম এবং ভিডিও তৈরি করে তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করত। ওইসব শর্ট ফিল্মে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করত জাহিদ।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর জাহিদ রিমার পরিবারকে না জানিয়ে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে গোপনে মধ্যম আশ্রাফপুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ঘটনা কারো কাছে না বলার জন্য ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদান করে। পরে বিষয়টি তার মাকে জানালে জাহিদের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে এবং তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলে যায়। সেখানেও জাহিদ তাদের বিভিন্নভাবে বিরক্ত করত। পরে বিভিন্ন প্রলোভনে আবারও সেখান থেকে রিমা ও তার ভাইকে বের করে এনে গোপনে আশ্রাফপুর বাসায় এনে রাখে।
পরে আরেক নারীকে (৩২) চাকরি দেওয়ার নাম করে তার গোপন বাসায় নিয়ে আসে। সেখানে রিমার ভাই এবং ওই নারীকে একটি রুমে আবদ্ধ রেখে তাদেরকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। জাহিদ পরবর্তীতে রিমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণ করে। এতে রিমার ভাই বাধা দিতে চাইলে আরেক নারীর (৩২) সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
এ ঘটনায় জাহিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে র্যাবের সহযোগিতায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।