এনজিও`র নাম সুপ্রভাত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা। সাইনবোর্ড লাগানো ঘরের সামনে ঘাস জন্মেছে। কোন স্টাফ নেই। কালেভাদ্রেও খোলা হয় না। নেই কোন কায়ক্রম। বলা যায় ওয়ান ম্যান শো।
এমন নাম সর্বস্ব এনজিওকে সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুধু এখানেই থেমে নেই। ঝিনাইদহে নাম সর্বস্ব এমন ৩৬টি এনজিও ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের বিশেষ অনুদান বরাদ্দ পেয়েছে।
সমাজসেবা ও মহিলা অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ৩৬টি এনজিওর মধ্যে প্রায় ৩০টির নেই অফিস। মালিক ছাড়া দ্বিতীয় কোন কর্মচারিও নেই। এক জনের আবার একাধীক এনজিও রয়েছে। খাতা কলমে এসব এনজিও অডিট করা হয়। জমা দেন নিজেদের পরিকল্পনার রিপোর্ট।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে ঝিনাইদহ জেলায় এমন ২২ টি এনজিও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান দপ্তর থেকে পেয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ঝিনাইদহের ১৪টি এনজিও বরাদ্দ পেয়েছে ৯ লাখ টাকা। কেউ কেউ একই এনজিওর নাম তালিকায় ২ বার দিয়ে টাকা নিয়েছেন।
ঝিনাইদহ শহরের পার্কপাড়ার ঠিকানা দেওয়া রয়েছে সুপ্রভাত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার। বরাদ্দ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে একটি অফিস নিয়েছেন এনজিওর সেক্রেটারি ও প্রধান নির্বাহী জেসমিন আক্তার।
তিনি ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা নেই। জেসমিন আক্তার জানান, এটি ছাড়াও তার ঘোমটা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নে আরো একটি এনজিও রয়েছে। সেটি তার পুত্রবধু দেখা শোনা করেন।
জেসমিন আক্তারের দুইটি এনজিও নামে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ২ লাখ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এই বরাদ্দ পেতে লাখে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে তিনি জানান। টাকা পাওয়ার পর ঝিনাইদহ পৌর এলাকা ও কালীচরণপুরে সাবান, স্যানিটাইজার, শিশু খাদ্য বিতরণ করেছেন তিনি।
ঝিনাইদহ শহরের থানার সামনে রয়েছে ডিজেবল ডিভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিডিও) নামের আরেকটি এনজিও। এনজিওটি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকেই একই ঠিকানা ও একই এনজিওর নামে দুইবার বরাদ্দ পেয়েছেন।
শহরের নতুন হাটখোলার এলাহী বক্স রোডে বৈশাখী যুব মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় যেখানে এনজিওর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দই বিক্রি করা হচ্ছে। এই এনজিওকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ৭৫ হাজার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হরেয়ছে।
বরাদ্দ পাওয়ার তালিকায় থাকা, অতিক্রম মহিলা সমিতি, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, ডেভেলপমেন্ট একটিভিটিস ও সোসাইটি, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, পরিচয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, মায়ের দোয়া স্বপ্নপূরণ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, পল্লী জননী সমাজ কল্যাণ সংস্থা, রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি,
জয়ীতা মহিলা কল্যাণ সংস্থা, সুন্দরপুর মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, উষা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, রংধনু মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থাসহ অনেক এনজিও নাম সর্বস্ব। অভিযোগ উঠেছে, নিজের শোবার ঘর অথবা অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এনজিওর নাম লিখে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বরাদ্দ নিচ্ছেন এ সব এনজিও। মাঠে তাদের বাস্তবে কোন কার্যক্রম নেই।
বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানান, আমি নিজে অনেক এনজিওর অফিস ও তাদের কর্যক্রম সরেজমিন দেখেছি। তাদের কোন ভবন নেই, অফিস নেই। নেই লোকবল। রিপোর্ট করার পরও এ সব এনজিও কিভাবে বরাদ্দ পায় তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে সমাজসেবা ও মহিলা অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা এই বরাদ্দ নিয়ে মিডিয়ার সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।