পেন্ডুলামের মতো বারবার দুলেছে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি। কখনও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, আবার কখনও কর্তৃত্ব প্রকাশ করেছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। অধিনায়ক ডেভিড মালানের ব্যাটে কুমিল্লা যখন জয়ের বন্দরে এগিয়ে যাচ্ছিলো, তখনই চট্টগ্রামের পক্ষে বল হাতে জ্বলে উঠলেন রুবেল হোসেন-রায়ান বার্লরা। কুমিল্লার হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ দুই ওভারেই ঘুরিয়ে দেন বার্ল ও রুবেল। মনে হচ্ছিলো সহজ জয় পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। তখনও বাকি ছিলো ম্যাচের নাটকীয়তা। বিশ্বকাপজয়ী পেসার লিয়াম প্লাংকেটের বিপক্ষে সাহসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আবু হায়দার রনি।
আর তাতেই সহজ জয়ের ম্যাচ কঠিন করে হলেও জিতে নেয় কুমিল্লা। ম্যাচে তাদের জয়ের বড় কৃতিত্ব দিতে হবে আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমানকেও। একদম শেষ বলে ৩ রানের চাহিদায় মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরেই ৩ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় নিশ্চিত করেন মুজিব। দুই দলের আগের মুখোমুখি লড়াইয়ে চলতি আসরের সর্বোচ্চ ২৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় সাক্ষাতে বড় সংগ্রহের আভাস দিয়েও তারা থেমে গেছে ১৫৯ রানে। যা তাড়া করতে আবার ইনিংসের একদম শেষ বল পর্যন্ত খেলেছে কুমিল্লা। অধিনায়ক ডেভিড মালানের ঝড়ো ইনিংসের পর রনি ও মুজিবের বীরত্বের শীর্ষে থাকা চট্টগ্রামকে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।
এদিকে চট্টগ্রামের করা ১৫৯ রান তাড়া করতে কুমিল্লা ৭ উইকেট হারালেও, তাদের জয়টি মূলত ২ উইকেটের। কেননা সানজামুল ইসলাম মাঠে ঢুকেও বেরিয়ে গেছেন। যে কারণে তাকে রিটায়ার্ড আউট দিয়েছেন আম্পায়াররা। ফলে কুমিল্লার জয়টিও ৩ উইকেটের বদলে হয়েছে ২ উইকেটে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের পরেও অবশ্য পয়েন্ট টেবিলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কেননা ৯ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে এখনও শীর্ষেই রয়েছে চট্টগ্রাম। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে ৩ জয় পাওয়া কুমিল্লা রয়ে গেছে নিজেদের পঞ্চম স্থানেই।
চট্টগ্রামের ছুড়ে দেয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে ঝড়ো শুরুই করেছিল কুমিল্লা। উদ্বোধনী জুটিতে ৩.৩ ওভারে আসে ৩০ রান। স্টিয়ান ভ্যান জিল ১২ বলে ২২ রান করে আউট হলে স্লথ হতে শুরু করে দলের ইনিংস। রবিউল ইসলাম রবি ১৯ বলে ১৭ ও সৌম্য সরকার ৫ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে গেলে ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৭০ রানের সংগ্রহ দাঁড়ায় কুমিল্লার।
ম্যাচের নায়ক মালানও শুরুতে ব্যাটে-বলে করতে খানিক ভোগান্তি পোহান। সাব্বির রহমানকে নিয়ে চতুর্থ ওভারে ইনিংস গড়ার পথে একপর্যায়ে ৩৩ বলে ২৭ রানে আটকে ছিলেন মালান। সেখান থেকে জিয়াউর রহমানের করা ১৪তম ওভারে ২ ছয়, ১ চার এবং লিয়াম প্লাংকেটের করা পরের ওভারে ২ ছয় হাঁকিয়ে নিজের ফিফটি পূরণ করেন মালান।
এ দুই ওভারেই জয়ের সমীকরণটাকে ৪২ বলে ৭১ থেকে ৩০ বলে ৩৪ রানে নামিয়ে আনেন কুমিল্লা অধিনায়ক। তবে পরের চার ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন চট্টগ্রামের বোলাররা। ইনিংসের ১৬তম ওভারে ৮ ও ১৮তম ওভারে মাত্র ১ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। মাঝে ১৭তম ওভারে ১ রান খরচায় ১ উইকেট নেন রায়ান বার্ল। যার ফলে ৫ ওভারে ৩৪ থেকে ২ ওভারে ২৪ রানে দাঁড়ায় কুমিল্লার সমীকরণ। ১৯তম ওভার করতে আসেন মেহেদি হাসান রানা। একটি বাউন্ডারি হজম করলেও তিনি সবমিলিয়ে খরচ করেন মাত্র ৮ রান। যার ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রান করতে হতো কুমিল্লাকে।
চট্টগ্রামের পক্ষে এ চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে আসেন বিশ্বকাপজয়ী পেসার প্লাংকেট। সামনে স্ট্রাইকে ছিলেন ৪৯ বলে ৭২ রান করা মালান। তবে প্রথম বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি মালান। যার ফলে পরের ৫ বলের জন্য স্ট্রাইকে চলে আসেন আবু হায়দার রনি। যার ব্যাটিং সামর্থ্য সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলো না প্লাংকেটের।
তাই টানা দুইটি ডেলিভারি শর্ট লেন্থে করেন ইংলিশ পেসার। দুই বলেই বাউন্ডারি হাঁকান রনি। ওভারের দ্বিতীয় বলে অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও ছিলো কুমিল্লার সঙ্গে। মিড উইকেটে নাসুম আহমেদ ও রায়ান বার্লের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবে নিশ্চিত ক্যাচ আউট থেকে বেঁচে গিয়ে সৌভাগ্যজনক ৪ রান পান রনি। পরের বলে অবশ্য সোজা ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন তিনি।
সমীকরণ নেমে আসে ৩ বলে ৫ রানে। চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে অধিনায়ক মালানকে স্ট্রাইক ফেরত দেন রনি। ২ বলে ৪ রানের সমীকরণে দ্রুত ডাবল নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফিরে যান ৫১ বলে ৭৪ রান করা মালান। উইকেটে আসেন মুজিব উর রহমান। জয়ের জন্য তখন ১ বলে প্রয়োজন ৩ রান। ভুল করে বসেন প্লাংকেট, দিয়ে বসেন লেগস্টাম্পে ফুলটস। সহজ সুযোগ পেয়ে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন আফগান স্পিনার মুজিব। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স আর জুনায়েদ সিদ্দিকী। ৬৯ বলের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে তারা তুলেন ১০৩ রান।
থিতু হয়ে যাওয়া এই জুটি যখন চোখ রাঙাচ্ছিল, তখন কুমিল্লার মুখে হাসি ফোটান বোলার সৌম্য সরকার। হাফসেঞ্চুরিয়ান সিমন্সকে সানজামুলের ক্যাচ বানিয়ে বড় ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন ডানহাতি এই পেসার। ৩৪ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় সিমন্স করেন ৫৪ রান। সেই শুরু! তিন বল ব্যবধানে পরের ওভারেই রানআউট হয়ে যান আরেক সেট ব্যাটসম্যান জুনায়েদ। ৩৭ বলে ৬ চারে তিনি তখন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় (৪৫)। তার পরের ওভারে ফের আঘাত সৌম্যর। এবার তার শিকার রায়ান বার্ল (২)।
ওভারে-ওভারে উইকেট হারানোর সেই গতিটা থামেনি তাতেও। ১৫তম ওভারে ৯ রান করে সানজামুলের কাছে উইকেট দেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। এরপর প্রায় একাই দলকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন জিয়াউর রহমান। মাঝে নুরুল হাসান সোহান (৪), লিয়াম প্লাংকেটরা (৪) সেভাবে সঙ্গ দিতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন জিয়া। ২১ বলে ৪ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। কুমিল্লার পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল সৌম্য সরকার। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান খরচায় তিনি নেন ২টি উইকেট।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।