আমেরিকান লেডি আর্মি অফিসার ডায়নার ফাঁদে রত্নেশ্বর খোয়ালেন ৭৮ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ৭ই জুলাই ২০২৪ ১০:১৬ অপরাহ্ন
আমেরিকান লেডি আর্মি অফিসার ডায়নার ফাঁদে রত্নেশ্বর খোয়ালেন ৭৮ লাখ টাকা

আমেরিকান লেডি আর্মি অফিসার ফেসবুক বন্ধু ডায়না’র পাঠানো লাগেজ ভর্তি ডলার আনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী রত্নেশ্বর মাঝি (৬৫)। তবে ৭৮ লাখ খোয়ানোর পর বুঝতে পেরেছেন প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন তিনি। এ ঘটনায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী রত্নেশ্বর। মামলা দায়েরের ৬ মাস পরে পুলিশ ৩৫ টি ব্যাংকের ৮৬ টি ডিজিটাল ব্যাংক (এটিএম) কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫১ টি চেকের পাতা, একটি অ্যানড্রয়েডসহ চারটি মোবাইল সেট ও ৮ টি সিমসহ প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে ঢাকার মতিঝিল থেকে গ্রেপ্তার করেছে। 


গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহাগ শেখ (২৪) শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের মো. জব্বার শেখের ছেলে।


রবিবার বেলা ১১ টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা, বিপিএম (বার)।


গ্রেপ্তারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ শেখ প্রতারক চক্রের প্রথম স্তরের প্রথম ম্যান। এখানে কমপক্ষে আরও ৪ থেকে ৫ টি ধাপে ১০-১২ বা তার অধিক সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে দেশের বাহিরে অর্থাৎ বিদেশেও একটি স্তর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা প্রতিটি স্তরে প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, মামলার বাদী বরিশাল নগরীর বাসিন্দা রতেœশ্বর মাঝি (৬৫) একজন বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী। গত বছরের ১৯ নভেম্বর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে খায়রুন নেছা নামে একজন নারী ফোন দিয়ে নিজেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর সে রতেœশ্বর মাঝিকে জানায়, যে তার (রতেœশ্বর মাঝির) নামে ডায়না নামের একজন একটি লাগেজ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে বিপুল পরিমাণে ডলার আছে। এরপর খায়রুন নেছা নামের ওই নারী বাদীকে বিভিন্নভাবে লোভে বশীভূত করেন এবং ডলারগুলো কাস্টমস থেকে ছাড়ানোর জন্য পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দাবি করেন। এতে প্রলুব্দ হয়ে বাদী মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ও বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে সর্বমোট ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রেরণ করেন। এরপরেও লাগেজ ছাড়াতে আরো টাকা লাগবে জানালে বাদী বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। তখন বাদী কোতয়ালি মডেল থানায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার তদন্ত শুরু করেন কোতয়ালি মডেল থানার এসআই মো. রেজাউল ইসলাম সহ একটি টিম। মামলাটি তদন্তের একপর্যায় থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রি ও এসআই মো. রেজাউল ইসলামসহ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চৌকস সাইবার টিম ঢাকার মতিঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। যে অভিযানে সোহাগ শেখকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩৫ টি ব্যাংকের ৮৬ টি ডিজিটাল ব্যাংক (এটিএম) কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫১ টি চেকের পাতা, একটি অ্যানড্রয়েডসহ চারটি মোবাইল সেট ও ৮ টি সিমসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ শেখ এর বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাও থানা সহ একাধিক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ চক্রের বাকী সদস্যের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। 


তিনি বলেন, এরা মূলত বিদেশি নাগরিকের নামে থাকা ফেসবুক আইডি থেকে টার্গেট ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করে। যেখানে ওই ফেসবুক আইডির ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ কিংবা অন্য কোন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে দাবি করেন এবং ব্যবসা করার জন্য দেশে আসতে চান। আর তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যক্তিতে কিছু গিফট পাঠানোর নামে প্রতারণার মূল নাটক শুরু হয়। গিফট পাঠিয়ে টার্গেট ব্যক্তির মেইল বা অন্য মাধ্যমে কিছু কাগজ পাঠানো হয়। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দেয়া ব্যক্তির পাঠানো কাগজের সাথে মিলে যায়। আর এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বাসটা অর্জনের চেষ্টা করে প্রতারকরা।


উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দেশের বাহিরেও চক্রের সদস্য থাকতে পারে। তবে এরা এত চালাক যে টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মাথায় বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উঠিয়ে ফেলে। আর গ্রেপ্তারকৃতর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া এটিএম কার্ডগুলো উত্তোলনের ক্ষেত্রে যে আইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো এ চক্রের কারও নয়। এখানেও জালিয়াতি করেছে তারা।