বেড়েই চলেছে সয়াবিন তেলের মূল্য। গত তিন সপ্তাহে লিটারে বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ টাকা। বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের পাশাপাশি বেড়েছে পাম অয়েলের মূল্যও। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, মানিকনগর, কারওয়ান বাজার এলাকার দোকানগুলোয় এই চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১২ ডিসেম্বর থেকে বেড়েছে ভোজ্য তেলের মূল্য। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এই পণ্যটির মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেল ও খোলা পাম অয়েলের মূল্য। গত তিন সপ্তাহে খোলা পাম অয়েল লিটারে বেড়েছে ১৪ টাকা। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের মূল্য ছিল ৬০ টাকা। গত ১৩ ডিসেম্বর ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। ২০ ডিসেম্বর আরও ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ টাকা। আর এই সপ্তাহে লিটারে ৪ টাকা বেড়ে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) এই খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৭৪ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, ‘শীত যত বাড়বে। সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের মূল্য ততই বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমত, মিল মালিকরা সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শীত বেড়ে যাওয়ায় পাম অয়েল জমাট বেঁধে গেছে। ফলে সয়াবিনের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে।’
এদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, সব ধরনের সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে। গত এক মাসে খোলা পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে, মুদি দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খোলা সয়াবিনে পাশাপাশি বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্যও বেড়েছে। এই সপ্তাহে ৫ লিটার ওজনের প্রতিটির মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে অবশ্য ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য বেড়েছিল ১৫ টাকা। অর্থাৎ গত তিন সপ্তাহে প্রতিটি বোতলের মূল্য বাড়লো ২৫ টাকা।
ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতিটি ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হতো ৪৩০ টাকা করে। ১৩ ডিসেম্বর মূল্য বেড়ে ৪৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৪৫৫ টাকা। এদিকে, টিসিবির হিসাবে গত এক মাসে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। গত নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখে এই সয়াবিনের মূল্য ছিল ৮০ টাকা লিটার। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮৬ থেকে ৮৮ টাকায়।
টিসিবির তথ্য বলছে, একমাস আগে প্রতি লিটার পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা। এই সেই পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে পাম অয়েল (সুপার) এর মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে, এক লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য আগের মতোই থাকলেও ৫ লিটার ওজনের সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে ২৫ টাকা। সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেছে।
এদিকে, নতুন করে বেড়েছে মসলা জাতীয় পণ্য এলাচের মূল্য। পর্যাপ্ত জোগান থাকার পরও খুচরা বাজারে হঠাৎ এই পণ্যটির মূল্য কেজিতে ২০০ টাকা বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে গুঁড়া দুধের মূল্য, ফার্মের মুরগির ডিম, মশুর ডাল ও নেপালি ডালের মূল্য। কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের মূল্য। বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় এই নিত্যপণ্যটির মূল্য কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি মিয়ানমার, চায়না, মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
মানিকনগর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি, পাতাসহ পেঁয়াজ ৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ তবে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ (নতুন) মানভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আর চীনা পেঁয়াজ ১০০ টাকা, মিসর ৬০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
শীতের সবজি বাড়লেও মূল্য গত সপ্তাহের মতোই। কিছু কিছু সবজির মূল্য বেড়েছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। করলা, শিমসহ কয়েকটি সবজির মূল্য বেড়েছে। তবে, কমেছে বিভিন্ন ধরনের শাকের মূল্য। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বাজারে ভরপুর শীতের সবজি থাকলেও অনেক সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। পেঁপেও ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় কেজি। মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। শিমের কেজি ২৫ থেকে ৬০ টাকা। নতুন আলু ও ঢেড়স বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। কাচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।