প্রকাশ: ৭ জুলাই ২০২৫, ১৯:১১
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার সুযোগ ছিল। তবে এখন ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের জন্য একটি নতুন মনোনয়নভিত্তিক গোল্ডেন ভিসা চালু করা হয়েছে, যা ব্যবসা বা সম্পত্তিতে বিশাল বিনিয়োগের দরকার কমিয়ে আনছে। এই নতুন নীতির আওতায় ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকরা কম খরচে এবং সহজ প্রক্রিয়ায় দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
আগে দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য দেশটিতে ব্যবসা করার বা অন্তত দুই মিলিয়ন দিরহাম মূল্যের সম্পত্তি কেনার প্রয়োজন ছিল, যা প্রায় ছয় কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু নতুন মনোনয়নভিত্তিক ভিসায় মাত্র এক লাখ দিরহাম অর্থাৎ প্রায় ৩৩ লাখ টাকার কিছু বেশি ফি দিয়ে এই ভিসা পাওয়া যাবে। এতে অনেকেই স্বপ্নের দুবাইতে বসবাস ও কাজের সুযোগ পাবে।
ভারতের পিটিআই সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ভারতীয় এই নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশে ও ভারতেও এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। রায়াদ গ্রুপ নামের পরামর্শক সংস্থা এই মনোনয়নভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার প্রাথমিক পরীক্ষা করছে।
রায়াদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়াদ কামাল আইয়ুব এই নতুন ভিসাকে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, এই পাইলট প্রকল্প সফলভাবে শেষ হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যান্য সিইপিএ আওতাভুক্ত দেশগুলিতেও এই ভিসা চালু হবে।
আবেদনের প্রক্রিয়াটি খুবই নিয়ন্ত্রিত। আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অর্থপাচার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড, পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের ইতিহাস পরীক্ষা করা হবে। এই যাচাইয়ের উদ্দেশ্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার ও অর্থনীতির ওপর আবেদনকারীর ইতিবাচক প্রভাব নির্ধারণ করা।
রায়াদ জানান, আবেদনপত্রগুলি সরকারে পাঠানোর পর নির্দিষ্ট দপ্তর এ ভিসার অনুমোদন প্রদান করবে। আবেদনকারীরা দুবাই সফর করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন, তবে প্রথম অনুমোদন তাদের নিজ নিজ দেশ থেকেই নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
ভিসার আবেদন ভারত ও বাংলাদেশের ওয়ান ভাস্কো সেন্টার, অনলাইন পোর্টাল অথবা ডেডিকেটেড কল সেন্টারের মাধ্যমে করা যাবে। এটি নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করার জন্য একাধিক মাধ্যম রাখা হয়েছে।
মনোনয়নভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার অন্যতম সুবিধা হলো এটি সম্পত্তি-ভিত্তিক গোল্ডেন ভিসা থেকে আলাদা। সম্পত্তি-ভিত্তিক ভিসা সম্পত্তি বিক্রি হলে বাতিল হয়ে যেতে পারে, কিন্তু মনোনয়নভিত্তিক ভিসা একবার পাওয়ার পর স্থায়ী থাকবে। ভিসাধারীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুবাইতে বসবাস করতে পারবেন এবং গৃহকর্মী ও গাড়িচালক রাখার সুবিধাও পাবেন। এছাড়া তারা দুবাইতে ব্যবসা করতে পারবেন এবং পেশাদার কাজেও নিয়োজিত থাকতে পারবেন।
এই নতুন ভিসা দুবাইয়ে বসবাস ও কাজের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের জন্য দুবাইয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিদেশি কর্মসংস্থানের গন্তব্য হিসেবে দুবাই তার অবস্থান বজায় রাখতে এই নতুন ভিসা নীতিকে কার্যকর করেছে। বিশেষ করে কম খরচে ভিসা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম, উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীরা দুবাইতে কাজের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবেন।
এই ভিসার মাধ্যমে দুবাইয়ের বাজারে বৈচিত্র্য আসবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটি ভারত ও বাংলাদেশের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য একটি স্বপ্ন পূরণের পথ খুলে দেবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারও আশা করছে, এই নয়া ভিসা নীতির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণগতমান উন্নত করতে পারবে এবং ব্যবসা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে। নতুন পাইলট প্রকল্প সফল হলে এই ভিসা আরও বেশি সংখ্যক দেশের নাগরিকদের জন্য খোলা হবে, যা দেশটির বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
সার্বিকভাবে, মনোনয়নভিত্তিক এই নতুন গোল্ডেন ভিসা ভারত ও বাংলাদেশের জন্য দুবাইয়ে বসবাস ও কাজের স্বপ্নকে আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক আরও নিবিড় করবে।
এখন অপেক্ষা শুধু এই পাইলট প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ও পরবর্তী দেশগুলোর জন্য এর সম্প্রসারণের জন্য। এর ফলে দুবাইয়ে ভবিষ্যতে আরও হাজারো ভারতীয় ও বাংলাদেশি তাদের স্বপ্নের ঘর তৈরি করতে সক্ষম হবেন।