বরিশালের লাকুটিয়া খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরুর দেড় মাস পরও ময়লা-আবর্জনার সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাল থেকে উত্তোলন করা আবর্জনা খালের পাশেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে, যা এখন নতুন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং জনপ্রতিনিধির অভাবে ভুক্তভোগীরা সঠিক সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নাগাল পাচ্ছেন না। তবে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ময়লা অপসারণ করা হবে।
সূত্রমতে, গত ১ নভেম্বর, শুক্রবার বরিশাল জেলা প্রশাসন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে লাকুটিয়া খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এ অভিযানের উদ্বোধন করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে খালটি পরিষ্কার না হওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সামান্য বৃষ্টিতেই আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এই পরিস্কার অভিযানের ফলে খাল থেকে ময়লা ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়। কিন্তু সেই ময়লা খালের পার ও আশপাশের রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়, যা এখন ধুলাবালিতে রূপ নিয়েছে। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে ফেলে রাখা আবর্জনা থেকে ধুলাবালি ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং আশপাশের সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, খাল পরিস্কার হওয়ায় আমরা প্রথমে আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু খালের পাশে ময়লা ফেলে রাখায় সেই সমস্যাই এখন আমাদের জন্য নতুন দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। ধুলার কারণে ঘরবাড়ি নোংরা হচ্ছে, আর রাস্তা দিয়ে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সিটি কর্পোরেশন যদি দ্রুত ময়লা সরিয়ে নিতো, তাহলে এই দুর্ভোগ হতো না। স্থানীয় প্রবীন বাসিন্দা লিয়াকত আলী জানান, খাল পরিস্কার হওয়ায় পানি চলাচল শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ময়লা আবর্জনা এই শুস্ক মৌসুমে সঠিক নিয়মে অপসারণ এবং খাল খনন করা না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানিপ্রবাহ পুরোপুরি সচল হবে না। তিনি বলেন, খালের পাশে থাকা বিসিক শিল্প নগরীর কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক নিয়মে না করায়ও খালে ময়লা আবর্জনা বাড়ছে।
সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে ময়লা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলতা না থাকায় এবং জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাদের অভিযোগ জানানোর জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।
সচেতন নাগরিকদের মতে, খাল পরিষ্কার করার পর ময়লার সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে পুরো উদ্যোগই ব্যর্থ হবে। এছাড়া ময়লা জমে থাকা যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে, তেমনি ধুলাবালি বায়ু দূষণের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, খাল পরিস্কার অভিযানের সাফল্য ধরে রাখতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী মুঠোফোনে বলেন, সমস্যার বিষয়ে তিনি জেনেছেন। খুব শীঘ্রই কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ময়লা ও আবর্জনা অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।