পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। গত দু'দিনে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এখনও তার প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা চড়া দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ঢাকার বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় বেশি দিন গুদামে রাখার সুযোগ নেই। এত দিন বেশি দামের আশায় যারা মজুদ করেছিলেন, তারা বড় কোম্পানিগুলোর আমদানির খবরে দ্রুত বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। এ কারণে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে দাম চড়া থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা কিছুটা কমেছে। শিগগিরই খুচরা বাজারে দাম কমে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
সোমবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি পেঁয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। দু'দিন আগেও এই বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ছিল। আমদানি করা মিয়ানমারের পেঁয়াজের দর উঠেছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। এখন তা কেজিতে ১০ টাকা কমে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তুরস্ক, মিসর ও চীনের বড় আকারের পেঁয়াজের দামও একই হারে কমে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ শ্যামবাজারে তেমন নেই। সোমবার কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫০ টাকা পাঁচ কেজি (পাল্লা) বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে কেজিতে দাম পড়ছে ১৫০ টাকা, যা দু'দিন আগেও ১৩০ টাকা ছিল।
পাইকারিতে দাম কমার প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। খুচরায় সোমবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ ও আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। মহল্লার দোকানিরা এখনও ১৫০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। শিগগিরই আরও কমে আসবে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ অন্যান্য বড় বাজারে মনিটরিংয়ের জন্য টিম পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ১০ হাজার টন এবং ১৫ তারিখের মধ্যে ৫০ হাজার টনের অনেক বড় লটে পেঁয়াজ দেশে আসবে। তখন দাম আরও কমবে। বড় গ্রুপের এই আমদানি ছাড়াও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন এক হাজার টন পেঁয়াজ আসছে। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে।
টিপু মুনশি আরও বলেন, ভারত ব্যাঙ্গালুরু থেকে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। ব্যাঙ্গালুরু থেকে ৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে। তবে ভারতের নাসিক থেকে এ দেশে পেঁয়াজ আসে। এখনও ওই অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা যেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এখনও বেশি ওঠেনি, এ মাসের শেষ দিকে দেশি নতুন পেঁয়াজ উঠবে বাজারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম গতকাল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বাজার মনিটর করে। মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে আমদানি করা পেঁয়াজ সব খরচ, লাভসহ ৬০ টাকার বেশি পাইকারি মূল্যে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। খুচরায় তা ৭০ টাকা হওয়ার কথা। যদিও পাইকারি আড়তে এই পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অধিক মজুদ রেখে এই অযৌক্তিক দামে বিক্রির অপরাধে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের চার পাইকারি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কমেছে। এই দর ততটা স্থায়ী নয়। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহের ওপর দাম নির্ভর করবে। এখন চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তবে আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ না বাড়লে দাম বেশি কমানো সম্ভব হবে না।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।