স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, বিপাকে আশাশুনির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: সোমবার ২৭শে মার্চ ২০২৩ ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, বিপাকে আশাশুনির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা

স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি ও ক্রেতারা শহরমুখী হওয়ার আশাশুনির স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরির কাজ ও কেনাবেচা কমে যাওয়ায় এবং স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে স্বর্ণের দোকানগুলো।অনেকেই স্বর্ণশিল্পী জুয়েলারির দোকান ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকছে নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কোন পেশায়। যারা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যেতে পারছে না তারা নিরুপায় হয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপার করছে। 


গত ১০ বছরের যে হারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে অন্য কোন জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায় নি।বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার প্রতিভরি ৯৬,৪৬১টাকা,২১ ক্যারেট ৯২,০৮৭টাকা,১৮ ক্যারেট ৭৮,০৯৬টাকা।প্রতি ভরি স্বর্ণ অলঙ্কার বানাতে গেলে ভরি প্রতি মজুরি যোগ হয় আরো ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে ভরিপ্রতি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৯২ হাজার ৩৪৭ টাকায়।


 সময়ের ব্যবধানে আকাশছোঁয়া হয়েছে স্বর্ণের বাজার। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালে স্বর্ণের ভরি ছিল ১৫৫ টাকা। ১৯৮০ সালে সোনার ভরি বিক্রি হয় ৩ হাজার ৭৫০ টাকা হয়। ১৯৯০ সালে সোনার ভরির দাম ঠেকে ৬ হাজার টাকায়। দশ বছর পর ২০০০ সালে ভরিতে ৯০৬ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ৯০৬ টাকায়। ২০১০ সালে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় এবং ২০১২ সালে গিয়ে ভরিপ্রতি সোনার দাম ঠেকে ৬০ হাজার ১৬২ টাকায়।


সভ্যতার সূচনা থেকে সোনার তৈরি বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার মানুষ ব্যবহার করতে শুরু করে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের অলঙ্কারের প্রতি সবারই একটা আকর্ষণ  চিরকালই বিদ্যমান ছিল। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের অলংকারের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও তেমন কেউ স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরি করছে না। বিশেষ করে নব বধূদের বিয়ের সময় ছাড়া তেমন একটা স্বর্ণের অলংকার তৈরি হচ্ছে না। 


আর এর প্রভাব পড়েছে স্বর্ণশিল্পীদের ওপর। এর ফলে স্বর্ণশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। স্বর্ণের দাম বাড়ায় ইমিটেশনের অলঙ্কার পরে সাজগোজ করতে দেখা যাচ্ছে। আশাশুনির বিশ্বকর্মা জুয়েলার্স , মাতৃ জুয়েলার্স, নিউ দে ব্রাদার্স, মাতৃ জুয়েলার্সসহ ৩০/৪০ টি জুয়েলারি দোকান রয়েছে।ওই সব জুয়েলার্স এর মালিকরা বলেন, এক সময় ব্যাপক স্বর্ণের অলঙ্কার বেচাকেনা হতো। 


বিগত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে স্বর্ণের কেনাবেচা একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। আবার অনেক ক্রেতারা না বুঝে শহরমুখী হওয়ায় বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরি ও কেনাবেচা নেই বললে চলে। সরকার আগামীতে স্বর্ণের দোকানি ও ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে যদি স্বর্ণের দাম হাতের নাগালে না নিয়ে আসে তা হলে আগামীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের চরম বিপাকে পড়তে হবে।


অপরদিকে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জুয়েলারি দোকানে কর্মরত কারিগরদের তেমন কাজকর্ম হচ্ছে না। তারা ব্যবসায়ীদের চেয়েও আরো করুন দুর্দশার মধ্যে জীবনযাপন করছে।


আশাশুনি জুয়েলারী সভাপতি দেব কুমার দে বলেন, স্বর্ণের দাম বিশ্ব বাজারে উঠানামা করায় তার প্রভাব দেশী বাজারেও পড়েছে। বাণিজ্যিকতার কারণেও অনেক গ্রামের কারিগর কাজ না থাকায় তারা শহরমুখী হচ্ছে। তবে স্বর্ণের দাম বিশ্ব বাজারে কমে আসলে স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কারিগরদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে না।