চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ নেই বরিশালের ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২২শে জুলাই ২০২১ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ নেই বরিশালের ব্যবসায়ীদের

কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই বরিশালের ব্যবসায়ীদের মাঝে। আর্থিক সংকট ও ব্যয় পুষিয়ে না ওঠার শঙ্কায় তারা চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যে চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে তা হয় হ্যাচকা দামে নয়তো বাকিতে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। 



এদিকে এবারে বাজারে চামড়া নিয়ে আসা সরবরাহকারীদের মধ্যে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।




 তাদের মতে, দাম ভাল না থাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করেনি, তবে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এতিমখানা’র লোকজন চামড়া নিয়ে আসছেন পাইকারদের কাছে।


 


এদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের হয়ে বাজারে চামড়া নিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলছেন, দর না থাকায় তারাও তেমন একটা চামড়া ক্রয় করেননি। বেশিরভাগ চামড়াই এলাকাভিত্তিকভাবে বিনামূল্যে সংগ্রহ করছেন। তবে সে সব চামড়া সংগ্রহ করে বাজার পর্যন্ত আনতে যানবাহনের যে ব্যয় হচ্ছে তাও এখন দিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।


 

অপরদিকে বিকেলের দিকে মোকামে নিয়ে আসা কিছু চামড়া সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ টাকা পেয়েছেন।তারা জানান, যাও পেয়েছি তা রেট অনুযায়ী নয় হ্যাচকা দরে। তা খুবই হতাশাজনক। সকল চামড়ার দরই আলোচনা করে ঠিক করে কিনছেন ব্যবসায়ীরা, এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত রেট পাওয়া যাচ্ছে না।


 

বরিশালের পদ্মাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মোঃ শামিম উল্লাহ বলেন, এবারে চামড়া সংগ্রহের কোন ইচ্ছাই ছিলো না। তাই কোরবানির দিন বিকেল পর্যন্ত বাসাতেই ছিলাম। বিকেলে কিছু লোক, যারা বিগত সময়ে বিশ্বাস করে চামড়া দিয়েছেন তাদের ফোনে আসতে বাধ্য হয়েছি। 



তিনি বলেন, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ টাকা আটকে থাকায় এখন নিজের কাছে থাকা ও ধার করা সামান্য কিছু টাকা নিয়ে চামড়া কিনতে বসেছি। বলতে পারেন দীর্ঘদিনের অভ্যেসের কারনেই চামড়া কিনতে বসেছি।


 

সরকার নির্ধারিত রেটে যেমন কিনতে পারছেন না, তেমনি সবাইকে টাকাও দিতে পারছেন না জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী বলেন,বরিশালে সর্বোচ্চ ১৮ ফুটের ওপরে চামড়া পাওয়া যায়না, আর তা খুবই কম। তবে সকল চামড়ার দরই আলোচনা করে ঠিক করে কিনতে হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত রেটে  কেনা যাচ্ছে না।


 


তিনি আরো জানান, যাও বা কিনেছেন বাকিতে অর্থাৎ পরবর্তীতে টাকা দেয়ার শর্তেও কিনতে হচ্ছে, আবার যদি একটি চামড়ার দর ৪শত টাকা হয় সেখানেও ৫০ টাকা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কারন পুজি সল্পতার কারনে চামড়া কেনার পাশাপাশি তা সরবরাহ করে লবন দিয়ে রাখার ব্যয়ের বিষয়টিও হিসেব করতে হচ্ছে।


 


সোলায়মান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, একটি চামড়া যদি সাড়ে ৩ শত টাকায় কেনা হয়, তাহলে সেটিকে লবন দিয়ে প্রসেসিং করে রাখতে শ্রমিক খরচসহ আরো ৩ শত টাকা খরচ হচ্ছে। তারপর পরিবহন খরচ দিয়ে ট্যানারিতে পাঠিয়ে সে দর পাবো কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।


 


বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাছির বলেন, এক সময়ে বহু চামড়া ব্যবসায়ী বরিশালে থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা আটকে যাওয়ায় এবং ঋণগ্রস্থ হয়ে পরায় এখন তা কমে এসেছে। অনেকে তো ব্যবসার ধরণও পাল্টে ফেলেছেন। এবার হিসেব কষলে মাত্র দু’জনে চামড়া সংগ্রহ করছেন।


 


তিনি জানান, এবারে পরিচিতোদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চামড়া সংগ্রহ করেছেন, সেখানে হয়তো বাকিতে আর নগদ মিলিয়ে নিজে সর্বোচ্চ ৬ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করতে পারি। 




ঈদের আগে যদি ট্যানারি মালিকরা পাওনা থেকে কিছু টাকাও দিতো তাহলে হয়তো আরো চামড়া সংগ্রহ করতে পারতাম। এবারে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের থেকে মাদ্রাসার লোকজনই চামড়া নিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।