ঢাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামছাড়া বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ ক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজি সহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে এখন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না, ব্যয় কাটছাঁট করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না।
টিসিবির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশি পিঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৬০-১৮০ টাকা, করলা ১০০-১২০, ঢেঁড়স ও পটোল ৮০-১০০, বরবটি ১০০-১২০, শসা ৮০, ঝিঙা ৮০-১০০, ধুন্দল ৯০-১০০, চিচিঙা ৮০, নতুন শিম ২২০-২৪০ এবং কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। মহাখালী কাঁচাবাজারে হেলাল উদ্দিন বলেন, “সরকারি নজরদারি না থাকায় বাজারে তালমাটাল অবস্থা। মাছ-মাংস কিনতে গেলে কয়েক হাজার টাকা লাগছে। ছোট মাছের দামও নাগালের বাইরে।” মিরপুর কাজীপাড়ার আক্তার হোসেন বলেন, “ডিম, সবজি—সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সরবরাহ কমেছে। বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতা হারুন বলেন, পাইকারি বাজারেই আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সবজি কিনতে হচ্ছে, ফলে খুচরায়ও বেশি দাম নিতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও তদারকির অভাবও দাম বৃদ্ধির দায়ী। ভোক্তা সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠন ‘ভোক্তা’র নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, ঢাকার বাজারে নরসিংদীর বেগুন ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিয়মিত হস্তক্ষেপ না হলে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। পাইকারি পর্যায়ে মনোপলি ভাঙা, খাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করতে হবে।”