প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৮
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার রসুলপুর এলাকার পাহাড়ি ভূমিতে মরুভূমির খেজুর চাষ করে নজরকাড়া সফলতা পেয়েছেন নূর আলম। এক সময় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও এখন তিনি পুরোপুরি কৃষিকাজে নিবেদিত। পাহাড়ে জমি কিনে শখের বশে ফলের বাগান শুরু করেই হয়ে উঠেছেন জেলার অন্যতম সফল ফলচাষি। তার এই প্রচেষ্টা পাহাড়ি কৃষির চেহারাই বদলে দিচ্ছে।
২০১৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে বারোহি জাতের ২৫টি খেজুর চারা এনে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। পরে সৌদি আরব থেকে আমবার জাতের আরও ৫০টি চারা এনে বাগান সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার দুই একরের খেজুর বাগানে ১২৫টি গাছ রয়েছে। এর বেশিরভাগ গাছেই এখন ফল ধরেছে, প্রতিটি গাছে ৪ থেকে ৭টি কাঠিতে লাল ও সবুজ খেজুর ঝুলছে।
নূর আলম জানান, ইউটিউব ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি চাষ পদ্ধতি শিখেছেন এবং মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জায়গাটি উপযোগী জেনে শুরু করেন চাষ। প্রথম বছরে তার আয় ছিল এক লাখ টাকার বেশি, দ্বিতীয় বছরে আয় তিন লাখ এবং চলতি বছর তার লক্ষ্য সাত লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা।
তিনি খেজুর ফলের পাশাপাশি চারা তৈরির কাজেও মনোযোগী হয়েছেন। প্রতিটি খেজুর চারা তিনি বিক্রি করছেন ১৫ হাজার টাকায়। তার উৎপাদিত খেজুর পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি গাছ থেকেই ৫৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নূর আলমের দাবি, তার খেজুর স্বাদ ও আকারে মরুভূমির খেজুরের মতোই উন্নত।
দেশি চাষে মরুভূমির খেজুরের সম্ভাবনা দেখেই তিনি আমদানিনির্ভরতা কমানোর কথা ভাবেন। তার মতে, দেশে এর চাহিদা যেমন প্রচুর, তেমনি উৎপাদনও সম্ভব। খরচও তুলনামূলক কম, বছরে একবার জৈব ও একবার রাসায়নিক সার দিলেই যথেষ্ট। পরিচর্যার ঝামেলাও কম, বাজারজাত করাও সহজ।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, নূর আলম সফলভাবে খেজুর চাষ করছেন এবং তার সাফল্যে অন্য কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া মরুভূমির খেজুর চাষের জন্য উপযোগী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নূর আলমের এই উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা পাহাড়ি কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ভবিষ্যতে আরও অনেকে তার পথ অনুসরণ করলে দেশে মরুভূমির খেজুর চাষ একটি লাভজনক খাতে পরিণত হতে পারে।