প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৪
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুধকুমার নদে কলা গাছের ভেলায় ভেসে আসা এক শিশুর মৃতদেহ স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। রোববার (২৭ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে গারুহারা ঘাটে ভেলা ভাসতে দেখে এলাকাবাসী সতর্ক হন। ভেলায় থাকা মৃতদেহটি চাদর, মশারি ও প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল, শুধু মুখটি দেখা যাচ্ছিল। সঙ্গে একটি চিরকুট ছিল, যেখানে শিশুটির পরিচয়সহ এক ফোন নম্বর উল্লেখ ছিল।
স্থানীয়রা ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে জানা যায়, মৃত শিশুটির নাম সুমীত দাস, তার পিতা আকুমনি দাস ও মাতা পদ্মা দাস। শিশুটি আসামের লালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে পরিচয় দেওয়া অনকু দাস জানান, সুমীত দাস তার ভাতিজা। তিনি জানান, ১০ জুলাই সাপের কামড়ে সুমীত মারা যায় এবং পরিবারের লোকজন বিশ্বাস করেন, নদীতে কলা গাছের ভেলা ভাসিয়ে দিলে সে আবার জীবিত হয়ে উঠবে। তাই তারা তাকে ভেলায় রেখে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী ফারুক খান জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তারা ভেলা ও মৃতদেহটি দেখতে পান এবং এরপরই পরিচয় জানতে ফোন করেন। এই ঘটনার পর যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, "শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি, তার স্বজনরা তাকে ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছে। ভেলা কোনো স্থানীয় আটকায়নি। দুপুরের পর ভেলা ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসতে দেখা গেছে।"
এই ঘটনাটি পৌরাণিক কাহিনির স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে, যেখানে বলা হয় সাপে কাটা মৃত ব্যক্তিকে কলা গাছের ভেলা করে নদীতে ভাসানো হয় এবং তারা একদিন আবার জীবিত হবে বলে বিশ্বাস করা হয়। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন, সুমীত দাসের পরিবারের এই বিশ্বাস ছিল তার প্রতি।
স্থানীয়দের মধ্যে এই ঘটনার প্রতি কৌতূহল ও চিন্তাভাবনা বেড়েছে। অনেকেই এই পদ্ধতিকে অপরিচিত এবং অস্বাভাবিক মনে করছেন। শিশু মৃত্যুর এ ধরনের ঘটনা সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই দুঃখজনক বলে মত প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
জেলার অন্যান্য স্থান থেকেও এই ঘটনার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে, যেখানে শিশুদের নিরাপত্তা এবং সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরণের পদ্ধতি পরিহারের অনুরোধও করা হচ্ছে।
সুমীত দাসের অকাল মৃত্যু নিয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ঘটনার পর জনসাধারণসহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে শিশুদের সুরক্ষা ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবেলায়।