প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪
টানা বৃষ্টি আর পরবর্তী অতিরিক্ত রোদের কবলে পড়ে মরিচ চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহের কৃষকরা। মাঠে জমে থাকা পানির কারণে গাছ পচে গেছে, পরে রোদে পুড়ে গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় জেলার হাজারো চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঝিনাইদহ জেলায় এ বছর ১ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরিতায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সদর উপজেলার চান্দেরপোল গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব জানান, তিনি ১৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন, যার মধ্যে ৫ শতক ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। একই গ্রামের কৃষক আবজাল হোসেন ও জবেদ আলীসহ অনেকে একই ধরনের সমস্যার কথা বলেছেন।
ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন জানান, তিনি ১ বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুটা ফসল তোলার পরেই গাছ মারা যেতে শুরু করেছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা ও ইকড়া গ্রামের চাষিরাও একই ধরনের দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। তারা বলছেন, মরিচ গাছ রক্ষায় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও কোনো কার্যকর ফল পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ঝিনাইদহের বাজারে এখন প্রতি কেজি মরিচ ১৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে মাত্র দুই দিন আগেও এই দাম ছিল ৭০ থেকে ১১০ টাকা।
জেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ৪১৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন। শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরেও মরিচ চাষ হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু বেশিরভাগ মাঠেই গাছ মরে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, ঝিনাইদহ তুলনামূলকভাবে উঁচু এলাকা হওয়ায় সাধারণত পানি জমে না, তবে এবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি আটকে ছিল। পরে তীব্র রোদে গাছগুলো মারা যায়। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ছত্রাকনাশক ব্যবহার ও পানি নিষ্কাশনের উপায় অবলম্বনের জন্য।
এই অবস্থায় কৃষকেরা যেমন ফসলহানিতে দিশেহারা, তেমনি ভোক্তারা দামবৃদ্ধিতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।