প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১৩:৩৯
কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত ঘেঁষা নাফ নদী দিয়ে মাদক পাচারের ঘটনা নতুন নয়, তবে এবার তা হয়েছে জেলে সেজে অভিনব কৌশলে। বুধবার দুপুরে টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অভিযান চালিয়ে মাছ ধরার ছদ্মবেশে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ দুই মিয়ানমার নাগরিককে আটক করে। আটক দুইজন হলেন মংডু জেলার ডেইলপাড়া এলাকার মো. ইলিয়াসের পুত্র মো. জুবায়ের (২০) এবং মৃত ইসলামের পুত্র নুরুল আমিন (২২)। অভিযানে একটি কাঠের নৌকা ও মাছ ধরার জালও জব্দ করা হয়েছে।
বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিজিবি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কৌশলগতভাবে টহল জোরদার করে। বেলা ১১টার দিকে সন্দেহজনক একটি নৌকাকে ধাওয়া করে আটক করা হয়। পরে তল্লাশির মাধ্যমে নৌকার পাটাতনের নিচে বিশেষভাবে মোড়ানো জালের ভেতরে ইয়াবা গুলো উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে এসে মাছ ধরার অজুহাতে নদীতে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশি সহযোগীদের কাছে তা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করেছিল। এর আগেও তারা এই পদ্ধতিতে মাদক পাচারে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বিজিবি।
নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও সম্প্রতি দিনের বেলায় আংশিকভাবে নদীতে মাছ ধরা চালু করা হয়েছে। তবে হোয়াইক্যং ও হ্নীলা এলাকায় নদী এখনও উম্মুক্ত করা হয়নি, যার প্রতিবাদে জেলেরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নদীপথে মাদক প্রবেশের প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া ও বিপদের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বিজিবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাছ ধরার ছদ্মবেশে ইয়াবা পাচার রোধে বিজিবি আরও তৎপর হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, নাফ নদীর মাছ শিকারের সুযোগ আবার চালু হলেও তার অপব্যবহার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও নজরদারি প্রয়োজন। শুধু পাচারকারীদের নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত জেলেদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করেই নদী ব্যবহার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এই ঘটনার পর আটক মাদক পাচারকারীদের টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পাচারে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। সীমান্তবর্তী এ নদী দিয়ে মাদক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে আরও কঠোর ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ দরকার বলে মত বিশেষজ্ঞদের।