প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১৭:৫৩
ঝিনাইদহে এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছে ২১৩ জন কিশোরী। ফলে ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। জেলা শিক্ষা অফিসের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য, যা সচেতন মহলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ২০৪ জন ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল, যার মধ্যে ১৭৪ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। পাশাপাশি দাখিলে ৩৩ এবং ভোকেশনালে ৬ জন ছাত্রীর বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। অথচ তারা সকলেই আগে ফরম পূরণ করেছিল।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও প্রশাসন জানিয়েছে, বিয়েগুলো অধিকাংশই গোপনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থান পরিবর্তন ও জন্মনিবন্ধনের বয়স বাড়িয়ে এসব বিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও অনেকে রক্ষা পায়নি।
রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ছয়টি উপজেলায় জরিপ চালিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও এই বাস্তবতা রীতিমতো হতাশাজনক।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সি ফিরোজা সুলতানা বলেন, প্রশাসনের গাফিলতি নেই, তবে গোপনে ও ভিন্ন স্থানে বিয়ে দেওয়ার কারণে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমাজের সব পক্ষের একসাথে কাজ ছাড়া এই ভয়াবহতা ঠেকানো সম্ভব নয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ২১৩ জন কিশোরীর বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধনে কারচুপি করে মিথ্যা বয়স দেখিয়ে বিয়ে দেওয়াই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণা কর্মকর্তা আফরোজা পারভীন জানান, মেয়েরা বিয়ের পর গোপনে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ফলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে যায়। এটি প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের তুলনায় বাল্যবিয়ের হার কিছুটা কমলেও মোট সংখ্যা এখনো ভয়াবহ। ঝিনাইদহে মেয়েদের শিক্ষা অব্যাহত রাখতে প্রশাসন, অভিভাবক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।