প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৩, ৩:৪৪
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরিত জাহাজ সাগর নন্দিনী ২ থেকে তেল অপসারণের সময় ফের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন দগ্ধ হওয়ার দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের পৌরসভার খেয়াঘাট সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে সাগর নন্দিনী-৪ নামের আরও একটি জাহাজ নোঙ্গর করা ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাকি তেল অপসারণের সময় জাহাজটিতে পুনরায় বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। এতে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, দগ্ধদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, সোমবার বিকালে জাহাজটির উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের তেল খালাসের কাজ চলছিল। এর মধ্যেই সন্ধ্যায় আবার একই জাহাজে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল। সন্ধ্যায় জাহাজটিতে ফের বিস্ফোরণের পর পরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল, ঝালকাঠি, কাউখালী ও নলছিটির চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) জাহাজটিতে আগুন জ্বলছিল।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) মো. সেলিম জানান, জাহাজটি থেকে আজ (সোমবার) সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ৭ লাখ লিটার ডিজেল বের করা হয়। এরপর মজুত ছিল ৪ লাখ লিটার পেট্রল। এ অবস্থায় এটি বিস্ফোরিত হলো।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক বলেন, জেলা পুলিশের ৬ জন ও নৌ পুলিশের ৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে ঝালকাঠি জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পুলিশ হাসপাতালে ও গুরুতর ২ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠির পদ্মা ডিপোতে শনিবার দুপুরে প্রথম জাহাজটিতে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন দগ্ধ হয় এবং নিখোঁজ হয় ৪জন। রবিবার বিকেলে জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে ট্যংকারটির গ্রিজার মো. হৃদয় হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে নিখোঁজ থাকা তিন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া কেবিনের ভেতরে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাহাজের সুকানি আকরাম হোসেনের মরদেহটি পাওয়া যায়। এটিই ছিলো জাহাজে নিখোঁজ থাকা শেষ ব্যক্তি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঝালকাঠির স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। এর আগে সোমবার সকাল ১১ টা এবং দুপুর ১ টায় জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিন এবং ড্রাইভার মাসুদুর রহমান বেলালের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। গত রবিবার এনিয়ে নিখোঁজ থাকা চার জনেরই মহদেহ উদ্ধার করা হলো। প্রত্যেকটি মরদেহ সনাক্ত করেছে তাদের স্বজনরা।
প্রসঙ্গত: পহেলা জুন শনিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জ্বালানি তেলবাহী ট্যংকার ‘ওটি সাগর নন্দিনী-২’ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনায় জাহাজের পেছনের তিনতলা বিশিষ্ট চালকের কক্ষ ও কেবিনের অংশ উড়ে গিয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। এর পর থেকে জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিন, সুকানি আকরাম হোসেন, ড্রাইভার মাসুদুর রহমান বেলাল ও গ্রিজার মো. হৃদয় নিখোঁজ হয়। ঘটনার সময় অগ্নিদগ্ধ হয় আরো চারজন। এরা হলেন, জাহাজের কর্মচারী শাকিল হোসেন, ফরিদুল আলম, ইকবাল হোসেন এবং মাইনুল ইসলাম হৃদয়। আহতরা রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারী ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।