নওগাঁর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ডা. মনজুর হোসেনের পরিবার আজও অবহেলিত। ভাষার মাস এলেই তার অবদান স্মরণ করা হলেও পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো নজর নেই। এমনকি তার সমাধিস্থলও অরক্ষিত ছিল দীর্ঘদিন। ২০০২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পাওয়া ছাড়া এই পরিবারের ভাগ্যে আর কোনো সরকারি স্বীকৃতি বা সুযোগ-সুবিধা জোটেনি। ১৯২৮ সালের ১৫ জুন জন্ম নেওয়া ডা. মনজুর হোসেন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। ভাষা আন্দোলনের আগে থেকেই বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের পর শহীদ মিনার নির্মাণের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। ভাষা সৈনিকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি "বিপ্লব দা" উপাধি পেয়েছিলেন।
জীবদ্দশায় বহুবার কারাবরণ করেছেন তিনি। পরিবারকে ত্যাগ করে সারাজীবন মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ডাক্তারি পড়া শেষ করে নিজ গ্রামে ফিরে গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন আমৃত্যু। ১৯৬৮ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার কবর ছিল অরক্ষিত। পরে ২০১১ সালে নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ তার কবর পাকা করে দেয়। সম্প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কবরের পাশে একটি ছোট শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।
বর্তমানে তার শতবর্ষী স্ত্রী, চার ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন। এত বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্র তাদের কোনো সম্মাননা দেয়নি। তার স্ত্রী আজও সরকারি কোনো ভাতা বা সহায়তা পাননি। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে পরিবার, একুশে পরিষদ ও স্থানীয় ক্লাব থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনোই কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়নি।
গোপন সূত্রের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে ভাষা সৈনিকদের পরিবারের প্রতি এমন উদাসীনতা নতুন কিছু নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও ভাষা সৈনিকদের পরিবার সেই স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "ভাষা সৈনিকরা যদি আন্দোলন না করতেন, তাহলে আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। অথচ তাদের পরিবার অবহেলায় পড়ে আছে।"
ডা. মনজুর হোসেনের ছেলে হাসান ইমাম তমাল বলেন, "ভাষা আন্দোলনই স্বাধীন বাংলার শেকড়। সেই শেকড়ের রক্ষকদের আমরা ভুলে গেছি। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন রাষ্ট্রীয় সম্মান পান, ভাষা সৈনিকদের পরিবারও সেই সম্মান পাওয়া উচিত।" তিনি ভাষা সৈনিকদের পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধার দাবি জানান।
একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট ডি.এম. আব্দুল বারী বলেন, "ভাষা আন্দোলন না হলে আমরা মাতৃভাষা পেতাম না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও পেতাম না। অথচ একজন ভাষা সৈনিকের কবর পর্যন্ত দেখভাল করা হয় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের আত্মত্যাগ ভুলে যাবে।"
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনুল আবেদীন জানান, "ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ডা. মনজুর হোসেনের পরিবারকে সামাজিক মর্যাদা দিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তাদের সার্বিক সহায়তার বিষয়েও আমরা কাজ করবো।"
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।