আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত চারজনের পরিচয় শনাক্ত ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে তাদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধামসোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১১টার দিকে দক্ষিণ বাইপাইল চারালপাড়া কবরস্থান থেকে জাহিদুল ইসলাম সাগরের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে ভাদাইল পবনারটেক কবরস্থান থেকে আশরাফুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে উত্তর গাজীরচট আমবাগান কবরস্থানে দাফনকৃত আবুল হোসেনসহ এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পুলিশ জানায়, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের স্বজন থানায় ও আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, যা তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিক জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত কয়েকজনকে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলে আদালত মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। নিহতদের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং সঠিক তদন্তের স্বার্থে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশুলিয়ায় সংঘটিত ওই আন্দোলনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে কারা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ছিলেন এবং কারা নিরপরাধ ভুক্তভোগী, তা নিশ্চিত করতে তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, নিহতদের স্বজনরা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন, অনেকেই বিনা অপরাধে গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং তাদের মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয়েছে। এখন মরদেহ উত্তোলনের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে বলে আশা করছেন তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মরদেহ উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হবে এবং পরবর্তী ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আন্দোলনের সময় নিহতদের সঠিক তদন্ত ছাড়া দাফন করা হওয়ায় অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। মরদেহ উত্তোলনের পর এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।
এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নতুন মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে এবং প্রয়োজন হলে আরও মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।