ভেজালের ভিড়ে খাঁটি শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। খাদ্য থেকে শুরু করে নানাবিদ জিনিসপত্রে হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে ভেজালদ্রব্য। যার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। এত এত ভেজালের ভিড়ে নিরাপদ খাদ্য খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবে সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরি করে সেই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আড়িয়াল নদী চরের দুই গ্রামের আখ চাষিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কুড়িরচর ও মিয়ারচর গ্রামের একাধিক আখ চাষিরা নিজ নিজ জমি থেকে আখ কেটে পরিষ্কার করে তা মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে রস বের করছেন। মাটির চুলার ওপরে রাখা টিনের তাফালে রস ছেঁকে ঢালছেন গুড় তৈরির কারিগররা। এরপর চুলায় দীর্ঘ সময় জ্বাল দেওয়ার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্রেতাদের সামনে প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে ভেজালমুক্ত আখের গুড়। তবে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করতে গিয়ে লাভের চেয়ে এ বছর লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
কুড়িরচর গ্রামের আখ চাষি আব্দুল খালেক খান জানান, এ বছর ১০০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। আখগুলো বর্তমানে পরিপক্ব হওয়ায় তা দিয়ে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে আসছি। আখ চাষের পর কৃষি অফিসের কোনো লোকজন এ পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেয়নি। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও তাদের আখক্ষেত পরিদর্শন করাতে পারিনি। সরকারি সহায়তা না পেলে আগামী বছর আখ চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
ওই গ্রামের আরেক চাষি তারিফ হোসেন বলেন, ৪০০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। এ বছর আখক্ষেতে পোকায় আক্রমণ করে আখ নষ্ট করে দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে পরামর্শ দিলে এবং কৃষি সহায়তা পেলে লাভবান হতে পারতাম।
মিয়ারচর গ্রামের চাষি আজিজুল প্যাদা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে। তাতেও আমরা লাভবান হতে পারবো না। প্রতি কেজি গুড় ২০০ টাকা দরে বিক্রি করলে লাভবান হতে পারব।
একাধিক ক্রেতা জানিয়েছেন, বাজারের গুড়ের চেয়ে এ গুড় ভেজালমুক্ত। আমাদের চোখের সামনেই আখের রস দিয়ে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে দিচ্ছেন আখ চাষিরা।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ বলেন, উপজেলার ১০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়েছে, যা দিয়ে খাঁটি গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে যাবতীয় পরামর্শ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। চাষিরা আখের দাম ভালো পেলে আগামীতে আখ চাষ আরও সম্প্রসারণ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।