বরিশালে সরকারি খাল ভরাট, আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে অক্টোবর ২০২১ ০৬:০১ অপরাহ্ন
বরিশালে সরকারি খাল ভরাট, আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি সরকারি খালে প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের বাড়ির রাস্তা নির্মানের পরিকল্পনা করে বাঁধ দিয়ে বালু ভরাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে পানিতে ডুবে বোরো ফসল ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসিকে। বাঁধ অপসারন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসি। 


ভূক্তভোগী কৃষক, ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার দিয়াসুর চকিদার বাড়ি হইতে  বড় খাল (মোল্লা খাল) ভায়া বাংলা বাজার সরকারি খালটি ২শ বছরের পুরানো খাল।  বর্তমানে এই খালটি প্রভাবশালীরা জবর দখল করে বালু ভরাট করায় দুই গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমন ধানের ক্ষেতে পানিতে তলিয়ে আমন চাষীর ফসল বিনষ্ট শীত মৌসুমে রবি শষ্য চাষ সম্পূর্নভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

 

সরকারি খালটির মধ্যবর্তি স্থানে সরকারি দলের সমর্থক ও  দিয়াশুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী হাওলাদারের ছেলে সুলতান হাওলাদার (৬৫) সহদর দুলাল হাওলাদার (৫০) ভাতিজা সাইদুল হাওলাদার (৪৫) তাদের বাড়ির সামনে দুইশ ফুট বাঁধ বাঁধ নির্মান কাজ শেষ করেছে। বাঁধের ফলে গত ৩/৪ দিনের বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়ে  প্রায় ৫শ একর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কালনা ও দিয়াসুর দুই গ্রামের ৫শ পরিবারকে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ১০/১২টি মুরগির ফার্ম ও একাধিক গরুর ফার্মে পানি ঢুকে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়। এ ছাড়া দিয়াসুর মল্লিক বাড়ি হইতে বাংলা বাজার পর্যন্ত কার্পেটিং সড়কটি পানিতে তলিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে । 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালনা ও দিয়াসুর গ্রামের আমন ধান ক্ষেতের ফসল ডুবে গেছে। বাড়িতে আঙ্গিনায় পানি জমে পথ ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কয়েকটি পুকুরের মাছ মরে গেছে। ভেঙ্গে গেছে রাস্তা। এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে দিয়াসুর গ্রামের  কমপক্ষে ৫জন বৃদ্ধ বলেন, মোগো বাব দাদা ও হ্যাগো পূর্ব পুরুষেরা খাল দিয়া নৌকায় ধান আখ আনা নেওয়া করত।  হেই সরকারি খাল দহল করায় মোগো ফসল নষ্ট অইয়া গেছে। 


গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৫০)সহ কয়েকজন বলেন, খালে বান দেয়ায় মোগো গ্রামের হগোলডিরি বাড়ি ঘরে পানি ওঠছে. মোগো রাস্তা ডুবে গেছে। গ্রামের মুরগীর ফার্ম গরুর ফার্ম পানিতে তলিয়ে গেছে। লিয়াকত হোসেন (৩২) বলেন, মুই ধার দেনা করইরা এক কেনি জমিতে আমন চাষ করছিলাম পানিতে সব তলাইয়া গেছে। মোর সব আশা ভরসা শেষ অইয়া গেছে। কি দিয়া দেনা দিমু আর কি দিয়া পোলঅপান বাচমু। 


আনোয়ারা বেগম বলেণ, বান দেওয়ায় পানি যাইতে না পাইররা মোর ঘরে পানি ঢুকার উপক্রম হয় এবং ঘরে পিরা ভাইংগা গেছে। মুই সমিতি দিয়া লোন লইয়া আমর ধান লাগাইছিলাম হেইয়া ডইব্বা গেছে। অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে দুলাল হাওলাদার বলেন, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় বাঁধ দিয়ে ভরাট করেছি কোন সরকারি খাখল করি নাই। কিছু লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।  


গৌরনদী পৌর সভার  ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ ইখতিয়ার হোসেন অবৈধভাবে সরকারি খাল দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, খাল ভরাটের ফলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি ও মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  কৃষকদের স্বার্থ সংরখ্সনে আমি কৃষক ও এলাকাবাসির দাবিকে সমর্থন করছি। 


এ ব্যপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে সরকারি খাল ভোগ দখল করতে দেয়া হবে না। বিষয়টি আমার নজরে আসছে। জনস্বার্থ সংরক্ষনে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।