জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে অন্তর্বর্তী সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌরভ নূর , বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:১০ অপরাহ্ন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে অন্তর্বর্তী সরকার

আজ বিকেলে এক সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীজনরা অংশ নেবে। বৈঠকটির মূল উদ্দেশ্য হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা, যাতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হবে। বিএনপি ইতোমধ্যে বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এই বৈঠকে অংশ নিতে গুলশান থেকে রওনা হচ্ছেন। 


বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারা অনুষ্ঠেয় বৈঠকে অংশ নেবে। এই বৈঠকে বিএনপির উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর, দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সালাউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে অংশ নিতে যথাসময়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। এর আগে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। 


বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে, যেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করা হবে এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। 


মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "এই বৈঠক থেকে একটি দলিল প্রণীত হবে, যা গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।" তিনি আরও বলেন, এই বৈঠক থেকেই ঘোষণা করা হবে, কবে ঘোষণাপত্রটি জারি হবে এবং সরকার কীভাবে তা কার্যকর করবে। 


এছাড়াও, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম উল্লেখ করেন, গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রেক্ষাপট এবং জনগণের প্রত্যাশা এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, সকল রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের মতামত গ্রহণ করে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে। 


এদিকে, বিএনপি এই বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে এবং দলের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বৈঠকের জন্য তাদের প্রতিনিধিকে মনোনীত করা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ কোনো নতুন শর্ত নির্ধারণ করা হয়নি এবং দলটি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। 


এই বৈঠকটি রাজনৈতিক মহলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এটি গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকটির মাধ্যমে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে আরও বেশি সংলাপ এবং সমঝোতা সৃষ্টি হতে পারে, যা আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হতে পারে। 


সর্বদলীয় বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত, যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটময় এবং জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তখন এই বৈঠকের মাধ্যমে সকল পক্ষের মতামত একত্রিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনগণের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিরোধের কারণে, জনগণ রাজপথে নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। তবে, এই বৈঠকটি যদি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে। 


এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে গণ-অভ্যুত্থান ও দেশব্যাপী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সম্মিলিত কৌশল এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।