সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জীবন কাহিনি এক নাটকীয় উত্থান এবং পতনের কিছুটা গল্প। ১৯৬৫ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী বাশার এক উচ্চবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন এবং চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে ১৯৯৪ সালে তাঁর বড় ভাই বাসিলের মৃত্যুর পর, পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
২০০০ সালে তাঁর বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তখন তাকে সংস্কারক এবং তরুণ নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছিল, আর জনগণ আশা করেছিল তিনি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নতুন পথে পরিচালিত করবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর বাশার তার বাবার কঠোর শাসনব্যবস্থা আরও জোরালো করেন। তিনি রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে রূপান্তরিত হন, যা তার স্বৈরশাসকের চেহারা আরও স্পষ্ট করে তোলে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু বাশার সংকটের সমাধানের পরিবর্তে দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলা, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সিরিয়া ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়।
গৃহযুদ্ধে লাখো মানুষের মৃত্যু এবং কোটি কোটি উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য বাশার আল-আসাদকে দায়ী করা হয়। তার শাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হলেও, রাশিয়া এবং ইরান তাকে সমর্থন করে। কিন্তু ২০২৪ সালে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দামেস্কের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে, বাশারের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে বাশার বাহিনীর দুর্বলতা এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন ছিল প্রধান কারণ। ইরান ও রাশিয়াও আর আগ্রহ দেখায়নি সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত, বিদ্রোহীদের দামেস্ক ঘিরে ফেললে, বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। সংবাদমাধ্যম জানায়, আসাদের সেনা সদস্যদের অনেকেই নিরাপত্তার জন্য গোপনে দেশ ত্যাগ করেন।
বাশার আল-আসাদের শাসন ছিল ক্ষমতালোভী এবং দমনমূলক, যা সিরিয়ার জনগণের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হলেও, সিরিয়ার জনগণ এখনো যুদ্ধের ক্ষত এবং পুনর্গঠনের দীর্ঘ পথে হাঁটছে। ইতিহাসে তিনি একজন স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবেন, যিনি নিজের ক্ষমতাকে জনগণের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।