সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দেশ থেকে আরও বেশি কর্মী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দুদিনব্যাপী বিশ্ব সরকার সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, বাণিজ্য ও ব্যবসার সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম বন্দরে আমিরাতি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ক্রীড়া ও শিক্ষা খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা আমিরাতি কোম্পানিগুলোকে তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেয়ৌদি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করলে প্রধান উপদেষ্টা আমিরাতি ব্যবসার জন্য একটি বিশেষ শিল্পপার্ক স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ কম খরচে শ্রম সুবিধা দিতে সক্ষম এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় ‘হালাল পণ্য উৎপাদন কেন্দ্র’ হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, তিনি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে চান। প্রধান উপদেষ্টা এ সফরকে দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য আমিরাতি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান এবং দেশটির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক সহযোগিতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব সরকার সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য খাতের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমিরাতি বিনিয়োগ, বাংলাদেশে ক্রীড়া উন্নয়ন এবং শিক্ষাখাতের যৌথ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে দুদেশের তরুণদের জন্য বিভিন্ন বিনিময় কর্মসূচি চালুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার সফরকালে আমিরাতি নেতাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং দেশটির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির বিশাল যোগান এবং উন্নত অবকাঠামো থাকায় এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
প্রধান উপদেষ্টা শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষ করে দেশে ফেরেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়ামন্ত্রী ড. আহমেদ বেলহুল আল ফালাসি দুবাই বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান। এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফেরার পথে রওনা হন।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিকেও নজর দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।