জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহারের যে কৌশল নিয়েছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে। বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উসকানি দেওয়া এবং সংগঠিত করার কাজটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে করা হয়।
প্রতিবেদনের ‘আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ-পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী আরও বেশি আক্রমণাত্মক অবস্থানে চলে যায়। এতে আরও বলা হয়, বিক্ষোভ যতই তীব্র হয়েছে, সরকার তত বেশি আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকদের মাঠে নামিয়ে দমন প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যেখানে যুবলীগের সদস্যদেরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে অনেক মধ্যবয়সী পুরুষও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন এবং আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের হামলা চালানো হয়। প্রতিবেদনে ১৪ জুলাইয়ের পরবর্তী দুই দিন ধরে চলা হামলার বিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একদিকে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান, অন্যদিকে ছাত্রলীগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টাও করেন।
প্রতিবেদনে পুলিশের ভূমিকার বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সহিংস পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই নির্লিপ্ত ছিল, কখনো কখনো সরাসরি হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছিল। এতে আন্দোলনকারীদের আত্মরক্ষার তাগিদে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়।
এক আওয়ামী লীগ নেতা ওএইচসিএইচআরকে বলেন, "আমাদের সাধারণ সম্পাদকের আহ্বানে মাঠে নেমে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঠেকানোর কথা ছিল ছাত্রলীগ কর্মীদের। কিন্তু যা ঘটে তা অপ্রত্যাশিত ছিল, শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।"
ওএইচসিএইচআরের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে সরকার যে ধরনের দমননীতির আশ্রয় নিয়েছিল, এই প্রতিবেদন তা স্পষ্ট করেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।