১০০ বিয়েতে বিচ্ছেদ ৩৬টি !

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর- টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: বুধবার ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
১০০ বিয়েতে বিচ্ছেদ ৩৬টি !

ভূঞাপুর উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিয়ের সংখ্যা বেড়ে গেলেও, একইভাবে বিচ্ছেদের হারও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলায় প্রতি ১০০টি বিয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬টি বিচ্ছেদ ঘটছে, যা স্থানীয় সমাজ ও পারিবারিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৮৩৭টি বিয়ের মধ্যে ৩১৯টি বিচ্ছেদ হয়, এবং ২০২৪ সালে বিয়ের সংখ্যা বেড়ে ৯২৯টিতে পৌঁছালেও, বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৭টি। ফলে, উপজেলায় বিচ্ছেদের হার ৩৬.২৮% পৌঁছেছে। এই প্রবণতা বিশেষ করে নিকরাইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি, যেখানে ১১৩টি বিচ্ছেদ হয়েছে। এছাড়া গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা, অলোয়া, ফলদা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায়ও বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।

বিচ্ছেদের পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, মাদকাসক্তি, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য চাপ এবং স্বামীর নির্যাতন এসব প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় সমাজে একটি উদ্বেগজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিভিন্ন নারী জানান, তারা কখনোই বিচ্ছেদ চাননি, তবে পারিবারিক অশান্তি ও মানসিক নির্যাতনের কারণে বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এক বিচ্ছেদকৃত নারী বলেন, “পারিবারিক অশান্তি ও আর্থিক সংকট আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন তৈরি করেছে। এখন আমি স্বাধীনভাবে জীবন শুরু করতে চাই।” অন্যদিকে, মাটিকাটা গ্রামের মো. মনির বলেন, “পরকীয়া ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে আমি জেলে গিয়েছিলাম, পরে আমার স্ত্রী আমাকে তালাক দেয়।”

স্থানীয় সমাজকর্মীরা জানান, সামাজিক কাঠামো এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে অধিকাংশ তরুণ-তরুণী তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন না। অনেক সময় পরিবার এবং সমাজের চাপের কারণে তাদের নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ভূঞাপুর উপজেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বলেন, “বিচ্ছেদ বা পরিবার ভাঙার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে একটি নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে, তবে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।” উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা বেগম বলেন, “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং অভিভাবকদের এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”

এ পরিস্থিতিতে, উপজেলায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজকর্মীরা বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে, বিচ্ছেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যাগুলি গভীরভাবে পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।