রায়গঞ্জে জামায়াতের সমাবেশ: ইসলামী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ শামছুল হক - সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:৫২ অপরাহ্ন
রায়গঞ্জে জামায়াতের সমাবেশ: ইসলামী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে জামায়াতের আয়োজনে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বক্তারা আগামী বাংলাদেশের জন্য ইসলামী নেতৃত্বের পক্ষে সুর তুলে বলেন, ইসলামের বিজয়কে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। জামায়াতের নেতারা একত্রিত হয়ে ইসলামী রাজনীতির গুরুত্ব এবং এর সফল বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন। 


সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বক্তব্য রাখেন যে, আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ এবং ইসলামই হবে দেশের পথপ্রদর্শক। তিনি আরও বলেন, ইসলামী রাজনীতি কেবল বাংলাদেশের একটি সাম্প্রদায়িক ভিত্তি নয়, বরং এটি দেশের উন্নতির জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। রফিকুল ইসলাম খান দাবি করেন, দেশের জনগণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, যাতে ইসলামী রাজনীতির বিজয় সম্ভব হয়। 


তিনি বলেন, "আমরা একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব, যেখানে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো একত্রিত হয়ে কাজ করবে। তাদের এই আন্দোলন যতই প্রতিরোধ করা হোক না কেন, ইসলামের বিজয় কখনো দমন করা সম্ভব নয়।" মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়ে একক কাঁতারে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 


সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহীনুর আলমও বক্তব্য রাখেন। তিনি দেশের অব্যাহত দুর্নীতি, ঘুষ এবং অবিচারের বিরুদ্ধে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমাজের সকল অসামঞ্জস্য দূর করতে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি যোগ করেন, জামায়াত কখনোই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষতি করেনি বরং তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে।


সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে বিরোধী মত দমনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড এবং জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রতি অত্যাচারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় এবং তাদেরকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়।


কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ডক্টর আব্দুস সামাদও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইসলামী আইন বাস্তবায়নের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, ইসলামী আইন চালু হলে দেশে সকল জনগণের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ দূর করতে এবং দেশকে একটি কল্যাণকর সমাজে পরিণত করতে ইসলামী আইন অপরিহার্য। 


সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন রায়গঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আলী মুর্তজা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, জামায়াত সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছে এবং এর নেতৃত্বের অধীনে দেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি আশাবাদী যে, আগামী নির্বাচনে জনগণ ইসলামী দলকে সমর্থন দিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে। 


বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সলঙ্গা থানার জামায়াতের আমির মাওলানা রাশেদুল ইসলাম শহীদ, তাড়াশ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা গোলাম সাকলাইন, এবং সিরাজগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতি মোঃ আলহাজ্ব উদ্দিন। তারা সমাবেশে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি জনগণের আগ্রহ এবং সমর্থন তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতে ইসলামী নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। 


সমাবেশের শেষ অংশে বক্তারা দেশের জনগণকে উদাত্ত আহ্বান জানান যে, আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতকে সমর্থন জানিয়ে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা একত্রিত হয়ে কাজ করবে। তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, ইসলামী নেতৃত্বে দেশের উন্নতি সম্ভব এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ইসলামী শাসন। 


এ ধরনের বিশাল সমাবেশ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি ও শাসনের প্রতিষ্ঠার জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। জামায়াতের নেতারা আশাবাদী যে, দেশবাসী তাদের ইসলামী শাসনের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে একত্রিত হবে এবং এক নতুন যুগের সূচনা হবে।