ইবির ২০০ কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিটিভির প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্তে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৯ অপরাহ্ন
ইবির ২০০ কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিটিভির প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্তে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তথ্য পাঠিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নির্যাতন, হামলা ও দমনপীড়নে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম ও সংশ্লিষ্ট প্রমাণ সংযুক্ত করে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। সোমবার এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি প্রতিনিধি দল ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীর নাম উঠে এসেছে। এছাড়া বিটিভির ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পিন্টু লাল দত্তের বিরুদ্ধেও সরকারের দুই খাত থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।  


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। এরপর ১ নভেম্বর প্রশাসন ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে চিঠি প্রেরণ এবং ৯ নভেম্বর গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। ১৯ নভেম্বর উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তা ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে আন্দোলনে বাধা, আন্দোলনকারীদের নির্যাতন ও হুমকি দেওয়ার ঘটনাসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।  


তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, আটক, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। আন্দোলন দমনকাজে সহযোগিতাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর নামও তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  


বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ আসকারী, অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক শাহীনুর রহমানসহ একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম তালিকায় রয়েছে। শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের কয়েকজন শীর্ষ নেতার নামও অভিযোগের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। আইন, পরিসংখ্যান, ব্যবস্থাপনা, আইসিটি, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, বায়োটেকনোলজি, চারুকলা ও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে জড়িত থাকার তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে।  


তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা এবং নির্যাতনের অভিযোগ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ক্যাম্পাসে সংঘটিত হলেও কিছু ঘটনা বাইরে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  


তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুন নাহার বলেন, "আমরা চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছিলাম, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছি। যেসব তথ্য পেয়েছি, তাতে অনেকের নাম এসেছে। এই তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।" বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।  


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদন খতিয়ে দেখছে। তারা অভিযোগের তথ্য যাচাই করে প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারে বলে জানা গেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে, এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষা করা হচ্ছে।