শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেমন জীবনের জন্য বাধা, তেমনি কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সেটিকে জয় করা সম্ভব—এটা প্রমাণ করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের ময়না আক্তার (২২)। প্রতিবন্ধী হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
ময়নার জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তার পরিবারে তিনি সবার বড় সন্তান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কারণে শৈশবেই অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন, তবে কখনো দমে যাননি। তিনি বিশ্বাস করেন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং সাহায্য পেলে প্রতিবন্ধীরাও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এখন উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি উলিপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পড়াশোনা ছাড়াও ময়না সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত। প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং আরডিআরএস-এর "চাইল্ড নট ব্রাইড" প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং সভায় অংশগ্রহণ করে তিনি বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করছেন। ময়না স্থানীয় ক্লাব, সরকারি সংস্থা এবং সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলেছেন। তার উদ্যোগে কমিউনিটি লেভেলে উঠান বৈঠক, সচেতনতা কর্মসূচি এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সহায়তায় বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।
ময়না, তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, নিজের বাল্যবিবাহ রোধে সফল হয়েছেন। তিনি তার বাবা-মাকে বুঝিয়ে বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সক্ষম হন। এছাড়া, তার সহপাঠী ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে ৬টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হন।
ময়না তার পড়াশোনা শেষ করে উচ্চ শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হতে চান, যাতে তিনি তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজে আরও অবদান রাখতে পারেন। তাঁর জীবনবোধ এবং কাজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হবে, যা অন্যদের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।
ময়নার সংগ্রাম এবং সফলতার গল্প সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।