মাদারীপুরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দখল নিয়ে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরিফুর রহমান,মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
মাদারীপুরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দখল নিয়ে তোলপাড়

 মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটেবাড়ি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাসার উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি লেখকের স্মৃতিবিজড়িত ওই ঘরে থাকা ছবি, বই ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে সেখানে ওএমএসের চাল মজুত করেছেন।


অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম সোহেল হাওলাদার। তিনি ডাসার উপজেলা বিএনপি কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সোহেল হাওলাদারের বাড়ি একই উপজেলার কাজীবাকাই এলাকায়। 


এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগটি সম্পর্কে অবগত, তবে এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। 


সোহেল হাওলাদার কর্তৃক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখলের এই ঘটনা স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাঁরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি লেখকের পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন। 


সাহিত্যিক মাসুদ সুমন বলেন, "সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা আমাদের দেশের সাহিত্য সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দখল হওয়ার খবর শুনে আমরা মর্মাহত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।" 


অন্যদিকে, কালকিনি উপজেলা ভেঙ্গে নবগঠিত ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় অবস্থিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার একাংশ খাসজমি হিসেবে রেকর্ড করা রয়েছে। সেখানে গত শনিবার দুপুরে বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তাঁর লোকজন টিনশেড ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও বইপত্র ভাঙচুর করে সেই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত করেন। 


স্থানীয় একজন ব্যক্তি, যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, "সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সোহেল হাওলাদার এই জমি তার নিজের বলে দাবি করে আসছিলেন। কেউ এর বিরোধিতা করলে, তাদের উপর আক্রমণ চালানো হতো। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের লোকজন ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায় না।"


এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, "সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার দখল নিয়ে আমরা খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"


সাহিত্যপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের দাবি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটাকে সংরক্ষণ করা হোক এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 


উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাদারীপুর মহকুমার রাজৈর উপজেলার আমগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক ভিটা ছিল কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।