গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতন, শেখা হাসিনার দেশত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুই যুবককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা, লাশ গুম ও হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ নানা অভিযোগে দিনাজপুরে হাকিমপুর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলায় দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন, পৌর মেয়র ও পৌর আ'লীগের সভাপতি জামিল হোসেন চলন্তসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ৯০-১০০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সোমবার ১৯ আগষ্ট সকাল ৮ঃ৩০ মিনিটে নিহত যুবক আসাদুজ্জামান নূরের বড় ভাই সুজন মিয়া বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে হাকিমপুর থানায় মামলাটি করেন। এছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। হাকিমপুর থানার মামলা নং ০৭।
বিষয়টি গত ২১ আগষ্ট গণমাধ্যম কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ দুলাল হোসেন পিপিএম।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন হাকিমপুর উপজেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান লিটন, সহ-সভাপতি শাহেদ মল্লিক বাবু (এমপির শশুর) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রেজা শাহীন, খট্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাওসার রহমান, বোয়ালদাড় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি সদরুল ইসলাম, আলীহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, পৌর আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ টুকু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম লিটন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল মল্লিক টগর, যুবলীগ নেতা আবু হাসনাত রনি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, পৌর আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র মিনহাজুল ইসলাম লিটন, সাবেক যুবলীগ নেতা রাজিউর রহমান মার্শাল, মোফাজ্জল হোসেন, সরুজ আলী, পৌর ওয়ার্ড আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক তমজিদ হোসন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ইমারুল মল্লিক রয়েল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামসহ ২৩ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাকিমপুর পৌর শহরে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের হুকুমে হাকিমপুর উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হিলি রেলওয়ে স্টেশনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে অংশ নেওয়া আসাদুজ্জামান নূর, নাঈম হোসেন, নাফিজ, মোস্তাকিম মেহেদী, মহিদুল ও বাবু আহম্মেদকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। পরে আসাদুজ্জামান নূর ও নাঈম হোসেনকে পৌর মেয়র জামিল হোসেনের বাড়িতে টর্চার সেলে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানে তাঁদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে সেখানে সূর্য ও নাঈমের মৃত্যু হয়। পরে আসামিরা এ দুজনের লাশ গুম করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে গভীর রাতে নাফিজ, মোস্তাকিম মেহেদী, মহিদুল ও বাবু আহম্মেদ কৌশলে পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওই তরুণেরা বিষয়টি সূর্য এর পরিবারকে জানান। তখন তাঁর বড় ভাই সুজনসহ স্থানীয় লোকজন পৌর মেয়রের বাড়িতে গিয়ে সূর্য ও নাঈমের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান।
পৌর মেয়রের বাড়ির লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিহত দুজনের অবস্থান বলেননি এবং তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি। পরদিন ৫ আগষ্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিহত এ দুজনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌর মেয়র জামিল হোসেনের বাড়ি থেকে আসাদুজ্জামান ও নাঈমের মরদেহ উদ্ধার করে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন পিপিএম বলেন, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হাকিমপুর হিলিতে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ১৯ আগষ্ট সোমবার থানায় এসে মামলাটি করেছেন নিহত আসাদুজ্জামান সূর্য এর বড় ভাই। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমানকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখঃ গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে সারাদেশের ন্যায় হাকিমপুর হিলি পৌর শহর ও উপজেলার ৬৩ টি বসত বাড়ী, দোকান ঘর ও অফিসে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে দূর্বৃত্তরা। ওই দিন বিকল থেকে রাত পর্যন্ত আ'লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বসত বাড়ী, অফিস ও দোকান ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চলে। সে দিন রাতেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন এর বাস ভবনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুটপাট করে দূর্বৃত্তরা। একই দিন রাতে পৌর মেয়র ও পৌর আ'লীগের সভাপতি জামিল হোসেন চলন্তর বাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুটপাট করে দূর্বৃত্তরা। ওই দিন রাতে পৌর মেয়র এর বাড়ি থেকে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিসের লোক জন সূর্য ও নাঈম এর মরদেহ উদ্ধার করে।
এঘটনায় গত ৮ আগষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শিল্পী, রন্জু মিয়া, তাজ, মিনুর ও কাওসার এর নামে উল্লেখ করে ও ৪০/৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে ওই দিন পৌর মেয়র ও পৌর আ'লীগের সভাপতি জামিল হোসেন চলন্ত থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শিল্পী, তাজ ও কাওসার রহমান এর নাম উল্লেখ করে এবং ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।