‘বাসায় না ঘুমানো ফেরারি জীবনের ৪৮তম দিন আজ। এভাবেই চলবে জীবন?’ এমন প্রশ্ন ছুড়ে ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট দেন বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদ মিলন। মন্তব্যের ঘরে একজন লেখেন, ‘মিলন, সবার তো একই অবস্থা।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘সময় এক দিন আসবে। সেদিন ইনশাআল্লাহ, সময় আবার কথা বলবে।’
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বাড়িছাড়া নুর মোহাম্মদ মিলন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন তাঁর মতো বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, দেড় মাসে তাদের প্রায় ৪০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নাশতকার মামলা দিয়েছে। বিষয়টিকে হয়রানিমূলক বলছেন তিনি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দলের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সামছুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজাহান সরকার, ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের সভাপতি হারুন-অর রশিদ, জামালপুর ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম, দামোদরপুর ইউনিয়নের সভাপতি খয়বর হোসেন রাজা রয়েছেন।
এ ছাড়া ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন উপজেলার দক্ষিণ কাজীবাড়ি সান্তোলা গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মঈনুল হাসান সাদিক। তিনি গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে চেয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কথায়, আটক নেতাকর্মীকে নাশকতার মামলায় জেলে দিচ্ছে পুলিশ। এ কারণে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও ঠাঁই মিলছে না। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শহর-গ্রামের শত শত নেতাকর্মী।
যুবদলের এক নেতা বলেন, পুলিশ আতঙ্কে নেতাকর্মীরা দিনে বের হন না। তাদের শীতের রাতও কাটছে খুব কষ্টে। হাট-বাজার করতে না পারায় পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, দেশে এর আগে কখনও রাজনৈতিকভাবে এমন হয়রানি করা হয়নি। এবার সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। তবে আশা করছেন, শিগগির সুদিন ফিরবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সামছুল হাসানের এক স্বজন জানান, তিনি (সামছুল) ঢাকার মহাসমাবেশে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে ঘরে ঢোকার আগেই ২৯ অক্টোবর দুপুরে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে নাশকতার মামলায়। তাঁকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন জামিনও হচ্ছে না।
সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকেই পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার অভিযানে নেমেছে। দেড় মাসে এখানে অন্তত ৪০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাদ পড়েননি জ্যেষ্ঠ নেতারাও। পুলিশের ভয়ে নেতাকর্মীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ। সাদুল্লাপুর থানার এক কর্মকর্তা বলেন, নাশকতায় জড়িত দুর্বৃত্তদের আটক করেছেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে মামলা হয়েছে, এতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছেন ১০০-১৫০ জনের মতো। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে নাশকতার সরঞ্জাম জব্দ করেছে পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।