বৈশ্বিক মহামারী করোনার ধাক্কায় সমগ্র বিশে^ কর্মমুখরতা কখনো স্থবির হয়, কখনো আবার একটু সচল হয়। এরই মধ্যে ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে নির্মাণ খাতগুলো। আর এর প্রভাব পড়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের উপর। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা এখন পেশা বদলাচ্ছে। পেশা বদল করে কেউবা এখন রিক্সা চালিয়ে, কেউ বা আবার হকারী জীবন বেছে নিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার রাশেদ। জীবিকার সন্ধানে ১০ বছর পূর্বে বরিশাল নগরীর কাউনিয়ায় আসেন। রাশেদ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি বলেন, মা-বাবা সন্তানসহ ৭ জনের পরিবার তার। করোনার সময় থেকেই নির্মাণ কাজ কমতে থাকে। সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে অনেকেই এখন আর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছে না। ফলে গত প্রায় দুই মাস পূর্বে তিনি একটি রিক্সা ক্রয় করে তা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঢালাই শ্রমিক হারুন জানান, গত কয়েক মাস ধরেই আগের মতো কাজ পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে এখন ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করছেন।
ঢালাই সর্দার ফোরকান জানান, করোনা পরবর্তী সময়ে নিয়মিত কাজ হতো। তবে রড সিমেন্টের দাম বাড়ার পর থেকে অনেকেই তাদের নির্মিত বিল্ডিং অসমাপ্ত রেখে দিয়েছেন। ফলে তাদেরও কাজ নেই। তিনি জানান, কাজ না থাকায় শ্রমিকদের অনেকেই বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার ফিরে গেছেন গ্রামে।
লেবার সর্দার মিজু আহমেদ জানান, কয়েক মাস পূর্বেও তার নেতৃত্বে প্রায় ৩০/৩৫ জন শ্রমিক কাজ করতো। সম্প্রতি ইট, বালু, রড, সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণে নির্মাণ কাজ নেই বললেই চলে। এ কারণে বর্তমানে তার শ্রমিক আছে ৭/৮ জন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেশিরভাগ গ্রামে গিয়ে দিনমজুরী করছেন। এছাড়া অনেকেই ভাড়ায় রিক্সা চালায়, কেউবা সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বরিশালে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলো ঘুরে জানা গেছে, আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগে এক টন রডের দাম ছিল ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকা। বাজার ভেদে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯৩ থেকে ৯৫ হাজার টাকায়। সিমেন্টের প্রতি বস্তায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৫শ’ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে পাথর, বালু, ইট ইত্যাদি। প্রতি ঘনফুট ৮ টাকা দরের বালুর দাম হয়েছে ৩০ টাকা, বেড়েছে ২৭৫ শতাংশ। প্রতি বর্গফুট পাথর ১৬০ থেকে বেড়ে এখন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতি বর্গফুটে কমপক্ষে ৫০০ টাকা নির্মাণ খরচ বেড়েছে।
নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা শুক্কুর ফকির জানান, বিশ্ববাজারে কাঁচামাল, পণ্য পরিবহনে জাহাজ ভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি জ্বালানি খরচ। এতসব সংকটের মধ্যে পড়ে লোকসান কমাতে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, লোকসান কমাতে মূল্য সমন্বয়ের বিকল্প কোম্পানিগুলোর সামনে নেই।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।