৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় বসছেন আবুল কালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৫১ অপরাহ্ন
৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় বসছেন আবুল কালাম

শিক্ষার কোনো বয়স হয় না। এমন বাণী হাদিসেও এসেছে যে ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বিদ্যার্জন কর’। তাইতো স্বপ্ন পূরণ করতে ছেলেরা প্রফেসর-ইঞ্জিনিয়ার হলেও স্কুল বেঞ্চে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাবা। ৬৭ বছর বয়সে কিশোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই বেঞ্চে পরীক্ষা দেয়ায় ঘটনা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। 


আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া গ্রামে। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। স্কুলজীবনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর পারিবারিক সংকটের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। 


আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আর্থিক অনটনের কারণে পরীক্ষা না দিয়ে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে থাকেন দীর্ঘ ১৮ বছর। বাড়ি ফিরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করেন লেখালেখি। দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলের বাবা তিনি। বড় ছেলে প্রফেসর, মেজো ছেলে কামিল পাশ ও ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। পুত্রবধূরাও শিক্ষিত। ইতোমধ্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান। এরমধ্যে দেহদাহ ও দেশরত্ন নামে দু’টি কবিতার বইও প্রকাশ করেছেন তিনি।


তিনি আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি শিক্ষিত হবেন। এ কারণে শেষ বয়সে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেন পড়ালেখা। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা।


তার মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম জানান, বাবা সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এ কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে পারেননি। শেষ বয়সে তার চাওয়া পূরণ করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার গান, কবিতা ও ছাড়া লিখেছেন।


খড়িয়াকাজীরচর ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া জানান, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে লেখা কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। গ্রামে তিনি কবি কালাম নামে অধিক পরিচিত। আবুল কালাম আজাদ এ বয়সে এসে ধৈর্যের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, এ কারণে আমরা খুশি।


আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫টি কবিতা লেখা হয়েছে। এ কবিতাগুলো যে কোনো মাধ্যমেই হোক প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছানোর সুযোগ চাই।


এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রহুল আলম তালুকদার বলেন, আবুল কালাম আজাদ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার কোনো বয়স নেই। তবে এ ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


তিনি আরও বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত ৩টি বই রচনা করেছেন যা আমাদের মুক্তিযোদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।