লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সমাজসেবা অফিসের কার্ডধারী প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তসহ অন্তত ১৪ শতাধিক সমাজসেবা অফিসের নিয়মিত কার্ডধারী ভাতাভোগী ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা ও খাদ্য-সংকটে ভুগছেন ভাতা নির্ভর এসব অসহায় মানুষ। আদিতমারী সমাজ সেবা অফিসের গাফিলতি আর অনিয়মের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছেন না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। সরকার প্রদত্ত ভাতার টাকা কার্ডধারীদের বিকাশ নম্বরে প্রেরণ না করে অন্য বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সমাজসেবা কর্মকর্তা দ্বায় স্বীকার করে জানান এবারের টাকা ভাতাভোগীরা না পেলেও আগামী অর্থবছরে সঠিকভাবে দেয়া হবে।
এদিকে আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর ও সোনালি ব্যাকের আদিতমারী শাখার ব্যাংক বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সেখানে ৯ হাজার টাকা অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে জমা হয়। এই টাকা আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম ওরুফে বাবু (৩০) ওই বছরের ২০ অক্টোবর উত্তোলন করেন বলে জানা গেছে। এর পর দ্বিতীয় দফায় ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে বিগত ১৫ মার্চ একই খাত থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে আরও ২ হাজার ২শ ৫০ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা হয়। এই টাকা তিনি গত ২৩ মার্চ উত্তোলন করেন। ছাত্রলীগ নেতা মাউদুল ইসলাম প্রতিবন্ধী হিসেবে তোলা টাকা ফেরত দিতে চান বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতা অসচ্ছল প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড করে ভাতা তোলার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের শারীরিক প্রতিবন্ধী নিখিল চন্দ্র, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ছকমল হোসেন, ভিখারিনী ও হেনা বেগম এদের দুনিয়াতে কেউ নেই বললেই চলে। তারা বলেন, আগে ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা পেতাম, কিন্তু মোবাইল একাউন্ট খোলার পর আর টাকা পাই না। এ যাবত ২০/২৫ বার আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে সমাধান তো হয়নি, কোনও সুপরামর্শও পাইনি আমরা। তাদের মতো অবস্থা এ উপজেলাটির আরও ১ হাজার ৪শ’ বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডধারীদের। বারবার সমাজসেবা অফিসে গিয়ে কোনও সমাধান না পাওয়ায় অসহায় জীবনযাপন করছেন তারা।
তবে সমাজসেবা দপ্তরের কেউ দায়িত্ব না নিয়ে তারা একে অপরকে দায়ী করছেন। দোষ যারেই হোক না কেনও এ টাকায় চলার একমাত্র অবলম্বন বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন ভাতা নির্ভর এসব অসহায় মানুষজন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ভাতা পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
অভিযোগ ওঠে আগে সোনালী ব্যাংক থেকে তারা নিয়মিত ভাতার টাকা তুলতে পারতেন কিন্তু বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রাপ্তি সেবা চালু হলে ভাতা বইয়ে তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে টাকা ঢুকছে না। সরকারের দেয়া টাকা চলে যাচ্ছে অন্য কারো বিকাশ নম্বরে। আবার কারও বিকাশ নম্বর সঠিক থাকলেও তারা পাওয়ার কথা সাড়ে ৪ হাজার কিন্তু টাকা পেয়েছে ১ হাজার ১০ টাকা। কেউ বছরে ৯ হাজার টাকা পাওয়ার কথা অথচ বিকাশে পেয়েছে ৭৫৫ টাকা।
বঞ্চিত এসব ভাতাভোগী মানুষ তাদের ভাতার অর্থ পাওয়ার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ করলেও তাদের কথায় কোনও কর্ণপাত করছেন না অফিসের কর্তারা। নিজের কাজের গাফিলতির কথা স্বীকার করে সময় স্বল্পতার জন্য ভাতা প্রদানে ত্রুটি হয়েছে বলে জানান আদিতমারী সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডল।
মাইদুল ইসলামকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সে সময় মাত্র ১৯ দিন আগে আমি এই উপজেলায় যোগদান করি। সব প্রসেস শেষ করে আমার সামনে ফাইল এসেছিল, আমি তাতে স্বাক্ষর করি।’ তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।