লালমনিরহাটের ‘সিনিয়র’ সাংবাদিক ও ঘাতক দালাল নিমূল কমিটি'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে এক বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলি উদ্ধার দেখিয়ে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কুলাঘাট ক্যাম্পের টহল দল তাকে আটক করেছে অভিযোগ উঠেছে।
জাহাঙ্গীর আলম শাহীন দৈনিক জনকন্ঠ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত এবং লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষ খোচা দ্বিমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মিশনমোড় ঈমানগঞ্জ এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে।
শুক্রবার সকালে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে বিজিবির নিকট থেকে থানায় সোপর্দ করা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে লালমনিরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফাস উদ্দিন শুনানি শেষে সিনিয়র সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে ২হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। শাহীনের পক্ষ জামিন শুনানী করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী মতিয়ার রহমান।
অ্যাড. মতিয়ার রহমান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন একজন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম কর্মী ও কলেজ শিক্ষক। একজন প্রগতিশীল সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনা নিছক সাজানো। বিজ্ঞ আদালত যুক্তি তর্ক শুনানী শেষে জামিন প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের স্বর্ণামতী বেইলী ব্রীজ এলাকায় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের সঙ্গে বিজিবির টহল দলের সঙ্গে তর্কাতর্কির ঘটনায় এক বোতল ফেন্সিডিল গুজিয়ে দিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে বলে শাহীনের বরাত দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের দাবী।
লালমনিরহাট ১৫-বিজিবি ব্যাটালিয়নের কুলাঘাট ক্যাম্পের ইনচার্জ হাবিলদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তাকে মারধর করিনি। তিনি হাত ঝটকা-ঝটকি করে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় ধস্তাধস্তিতে হয়তো তাকে আঘাত লেগে থাকতে পারে।’
তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা স্বর্ণামতি বেইলী ব্রীজে টহল করছিলাম। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম মোটরসাইকেল যোগে লালমনিরহাট শহরের যাচ্ছিলেন। আমরা তাকে থামাই। এরপর তাকে সার্চ করে এক বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল পাই। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তাকে লালমনিরহাট সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।’
এদিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ জুয়েল রানা জানান শাহীনের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিজিবির হাবিলদার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে শুক্রবার সকাল ৫টা ৩৫মিনিটে জরুরী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন এবং তাকে পরে তারা নিয়ে যান।’
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল এসএম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাউকে তার পরিচয় দিয়ে বিবেচনা করি না। মাদকের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি আমরা অনুসরন করে থাকি। যেহেতু মাদকসহ তাকে আটক করা হয়েছে। তাই বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্বর্ণামতি বেইলী সেতুর নিকটে বিজিবির টহল দলকে কোনভাবেই সহযোগিতা করেননি। বরং যখন তার মোটরসাইকেলটি সার্চ করতে চায় তখনই তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মাদকসহ যেই ধরা পড়–ক না কেন, তিনি তখন নিজেকে নির্দোষ দাবী করে। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমও একই দাবী করে থাকতে পারে।’
শুক্রবার সকালে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শাহীন সাংবাদিকতার কাজে গিয়েছিলেন বলে জানি। শাহীনের সঙ্গে যিনি ছিল তাকে আটক করা হয়নি। অথচ আমার স্বামীকে আটক করা হলো কেন? তাকে কেন মারধর করা হয়েছে? তিনি একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক। অথচ তাকে এক বোতল ফেন্সিডিল দিয়ে আটক করে কোমড়ে দড়ি বেঁধে এবং হাতে হাত কড়া পড়িয়ে থানায় আনা হয়েছে। তার সঙ্গে জঘন্য অপরাধীদের মতোই আচরণ করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাই।’
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম বিজিবির পক্ষ থেকে মাদক মামলার অভিযোগ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হচ্ছে। সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।