প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৬
বাংলাদেশে ইসলামি সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে দুটি সাম্প্রতিক ঘটনা। একদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উদ্বোধন হয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ডিস্ট্রিক্ট মডেল মসজিদ, যা শুধু নামাজের জায়গা নয় বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করবে। অন্যদিকে হালাল পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক বিশ্লেষণ উঠে এসেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা এ.এফ.এম. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যে মডেল মসজিদগুলোতে রয়েছে নারী-পুরুষ আলাদা নামাজ কক্ষ, ওজুখানা, ইসলামি গবেষণার জন্য লাইব্রেরি এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট স্থান। তিনি বিশ্বাস করেন, এই মসজিদ স্থানীয় মুসলিম সমাজের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সঙ্গেও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি আরও একাধিক জেলায় মডেল মসজিদ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা মূলত ইসলামি শিক্ষার প্রসার, ধর্মীয় চেতনা জাগ্রতকরণ এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পরিকল্পিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মডেল মসজিদটি এই ধারাবাহিকতারই অংশ, এবং স্থানীয়রা আশা করছেন এটি তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় উৎসাহী করবে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক হালাল খাদ্য বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ৩.৩০ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে তা ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বাংলাদেশ তার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা, ভৌগলিক অবস্থান এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কারণে এই বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে সক্ষম হতে পারে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, হালাল পণ্য শুধু খাদ্য নয়—এর মধ্যে প্রসাধনী, ফার্মাসিউটিক্যালস, পোশাক এবং সেবা খাতও অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হালাল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে পারে এবং উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে, তাহলে রপ্তানি আয়ে বিশাল বৃদ্ধি সম্ভব।
এদিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘ইন্তিফাদা বাংলাদেশ’ নামের একটি প্যান-ইসলামিক আন্দোলন। এটি ধর্মীয় চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম, যা সামাজিক ন্যায়বিচার, মুসলিম ঐক্য ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েছে। জুলাই মাসে ঢাকা শাপলা চত্বরে তাদের একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দাবি তোলা হয়।
ইসলামি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মডেল মসজিদ, হালাল শিল্পের প্রসার এবং সামাজিক আন্দোলন—সবকিছু মিলিয়ে এক নতুন ধারা তৈরি করতে পারে, যা দেশের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত নীতি, আন্তরিকতা এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিশ্রুতি।
সর্বোপরি, বাংলাদেশে ইসলামি উন্নয়নের এই বহুমুখী পদক্ষেপগুলো শুধু আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক থেকেই নয় বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রীতি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে সরকার, বেসরকারি খাত এবং সমাজের সকল স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি।