ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা ও তাদের পাশে থাকা শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। মহান আল কোরআনের দৃষ্টিতে মানুষ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত— একদল মুমিন বা বিশ্বাসী, অন্যদল কাফির বা অবিশ্বাসী। মুমিনদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তারা আল্লাহর দেয়া আদেশ ও নির্দেশকে জীবনব্যাপী বাস্তবায়ন করে। আর সেই আদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মুসলিম উম্মাহর দুর্দিনে পাশে থাকা, তাদের কষ্টে সহানুভূতিশীল হওয়া।
ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি রাখা মুমিনের ঈমানের অঙ্গ। কারণ, সেখানে মুসলিমদের প্রথম কিবলা, বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত। ফিলিস্তিনের মাটি শুধু একটি দেশ নয়; বরং তা মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় গৌরবের অংশ। ইসলামের শুরু থেকেই এই ভূমি বরকতময় বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন ইসরা ও মিরাজের ঘটনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন করে সকল নবীদের ইমামতি করেন। এরপর এখান থেকেই তিনি ঊর্ধ্বাকাশে মিরাজে গমন করেন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে।
ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদুল আকসা মুসলিমদের প্রথম কিবলা। দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা এই দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। পরে আল্লাহর নির্দেশে কিবলা পরিবর্তন হয় মসজিদুল হারামের দিকে। তবুও মসজিদুল আকসার প্রতি মুসলিমদের সম্মান, ভালোবাসা ও দায়িত্ব আগের মতই রয়ে গেছে।
আল কোরআনের বহু স্থানে ফিলিস্তিনকে বরকতময় জমিন বলা হয়েছে। সূরা আম্বিয়ায় ইবরাহিম (আ.) ও লুত (আ.)-কে এই ভূখণ্ডে নিয়ে আসার কথা উল্লেখ আছে। মুসা (আ.)-এর ঘটনায়ও বর্ণিত হয়েছে, বনি ইসরাইলকে এই বরকতময় জমিনের উত্তরাধিকারী করা হয়েছিল। এসব আয়াতই প্রমাণ করে, ফিলিস্তিনের মাটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের অধিকারী।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের প্রতি মুসলিমদের ভালোবাসা রাখা, তাদের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকা, তাদের মুক্তির জন্য দোয়া ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী কর্তব্য। এ ব্যাপারে সকল মাজহাব, মত, দল-মত নির্বিশেষে মুসলিমরা ঐক্যমত পোষণ করে থাকে।
আজ যখন ফিলিস্তিনে নিরীহ মুসলিম জনগণ অন্যায় আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে, তখন শুধু কথা নয়, তাদের জন্য দোয়া, সহানুভূতি, সাহায্য, সচেতনতা এবং সত্য প্রচারের মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানের দাবি। ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ব শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, বরং বিশ্ব মুসলিমের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া এক অমর দায়িত্ব।