‘বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের যেকোনো সমস্যা-অসঙ্গতি নিয়ে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এজন্য আমাকে রাজনীতিতে আসতে হবে এমন মন্তব্য ঠিক নয়।’ শনিবার সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে এক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে এই মন্তব্য করেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি। সাম্প্রতিক সময়ে তার বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে সাফাই দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি একটি মাহফিলে আজহারি ইসলামের আলোকে দেশ গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইসলামের আলোকে দেশ সাজাবো। কোনো জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি হতে দেব না। গত ১৫ বছরে দেশে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। যখন অন্য দেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, তখন আমাদের দেশের একটি অংশ লুটপাটে ব্যস্ত। আমাদের কোরআনের আলোকে দেশ গড়তে হবে।’
আজহারির এই বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা শামসুজ্জামান দুদু এক আলোচনায় তাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
শনিবারের মাহফিলে আজহারি বলেন, তার বক্তব্য কোনো নির্দিষ্ট দলকে উদ্দেশ্য করে নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা কুরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে। কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। অথচ কিছু মহল এটি নিজেদের সঙ্গে জড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এটি খুবই অনভিপ্রেত। সাধারণ মানুষের কাছে এটি নেতিবাচক বার্তা দেয়। এমনটা হওয়া উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন আলেম এবং একজন সাধারণ নাগরিক। আমার দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার রয়েছে। তবে এটাকে রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে আমাকে কোনো দলে টেনে নেওয়ার চেষ্টা সঠিক নয়। সবার উচিত গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সৎ ও স্বচ্ছ পথে দেশের উন্নয়নে কাজ করা।’
আজহারি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, ‘ক্ষমতার পালাবদলের পরই আমরা দুর্নীতির ফিরিস্তি জানতে পারি। এর আগে কিছুই প্রকাশিত হয় না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলে এ ধরনের সমস্যার শিকড় রয়েছে। এখনই সময় এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির মতো সমস্যা আমাদের দেশে আর থাকা উচিত নয়। এ জন্য দেশের নিবন্ধিত ৩৮টি রাজনৈতিক দলেরই শপথ নেওয়া উচিত, যাতে দেশ একটি সৎ ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ পায়।’
আঞ্জুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে এসব কথা বলেন আজহারি। সন্ধ্যায় তিনি মঞ্চে ওঠেন এবং রাত ৮টায় তাফসির পেশ করেন। মাহফিলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
এই বক্তব্য দিয়ে আজহারি আবারও স্পষ্ট করেছেন, তিনি কোনো দলের পক্ষে নন বরং ইসলামের আলোকে দেশের উন্নয়নে তার মত প্রকাশ করে যাবেন। তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জনমনে যেমন আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই ধরনের আরও কোনো বিষয় বা তথ্য সংযোজনের প্রয়োজন হলে জানাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।