ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেশে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নভেম্বর মাসে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়তে থাকার কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসে (নভেম্বর) ডেঙ্গুতে ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এক মাসে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া, নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ হাজার ৬৫২ জন ডেঙ্গু রোগী।
ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা গত মাসগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারিতে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ৫, এপ্রিলে ২, মে মাসে ১২, জুনে ৮, জুলাইতে ১২, আগস্টে ২৭, সেপ্টেম্বর মাসে ৮০ এবং অক্টোবরে ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়। অক্টোবরের পর নভেম্বরে মৃত্যুর সংখ্যা আবারও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯১ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে ৪৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরও তাগিদ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, "ডেঙ্গু আর সিজনাল রোগ নয়, এটি এখন সারা বছরই হচ্ছে। বিশেষত বৃষ্টির মৌসুমে এর প্রকোপ বাড়ে। মশাবাহিত রোগটির প্রতিরোধে মশা নিধন কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে।"
এদিকে, কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গু মোকাবেলায় শুধু মশা নিধন কার্যক্রম বা জরিমানা কার্যকর হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক জরিপ, দক্ষ জনবল এবং যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গত বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে শুধু মশা নিধন নয়, সিটি করপোরেশনগুলোর মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।