সর্বশক্তি দিয়ে লড়তে চায় ইউক্রেন, দেশে ফিরতে চায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৭ অপরাহ্ন
সর্বশক্তি দিয়ে লড়তে চায় ইউক্রেন, দেশে ফিরতে চায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা

ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল আকার ধারন করছে। বর্তমান পরিস্থিরি প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে পার্শ্ববর্তী পোলান্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে সেক্ষেত্রে তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা। অন্যদিকে ইউক্রেন এর নাগরিকরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে চায় সর্বশক্তি দিয়ে। তবে হতাশ হয়েছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কার্যকরী ব্যবস্থা না গ্রহণ করায়। এরই মধ্যে আজ ( বৃহস্পতিবার ) ভোর রাত সাড়ে ৫টায় এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউক্রেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ও সেখানকার স্থানীয় বাসীন্দাদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন আমাদের প্রতিনিধি সবুজ হোসেন।


ইউক্রেনের মাইকোলাইভ শহরে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ান ফেডারেশন এবং বেলারুশপন্থি রুশ সৈন্যরা হামলা চালায়। বাংলাদেশী সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলীয় লুহানস্ক, সামি, খারকিভ, ছেরনিহিভ এবং ঝিতোমির অঞ্চলে হামলা চালানো হয়। এর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ বিমানবন্দরে হামলা হয়েছে। ইউক্রেন সরকার তাদের মত করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিরোধের। তবে ইউক্রেন প্রশাসন কখনোই চায়না যুদ্ধ হোক। যেহেতেু হামলার ঘটনা ঘটছে। যার জন্য প্রতিরোধমূলক সকল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির প্রশাসন।


তৌহিদ বলেন, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইউক্রেন ছাড়তে চাইলেও তা সম্বব হচ্ছেনা। বিমানবন্দরে হামলা চালানো হয়েছে। আর আজ ভোর থেকে ইউক্রেন এর তিন-চার দিক থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭জন নিহত হয়েছেন বোমা হামলায় বলে জানতে পেরেছি। এছাড়া অনেকেই হতাহত হয়েছেন। তার সঠিক হিসাব এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে জানানো হয়নি।


তৌহিদ আরো বলেন, এখানে বাংলাদেশের একটি বহুজাতিক কোম্পানির একটি প্রকল্পে কাজ করছি আমি এবং আমার স্ত্রী সাথে আমাদের একটি ছেলে সন্তানও আছে। সব মিলে খুব ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পোলান্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের সতর্ক ও তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে বলেছে । আবার পোলান্ডে যদি যাওয়া যায় সেই পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পোলান্ড এর ভিসা পাওয়া কোনভাবেই সম্বব নয়। এগুলো ফরমালিটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।


আমিনা খাতুন নামের মাইকোলাইভ শহরে বসবাসকারী আরেক প্রবাসী বাংলাদেশী বলেন, এখানকার স্থানীয় দূতাবাস থেকে গতকাল ( বুধবার রাতে ) একটি জুম মিটিং করা হয়েছিল। সে সময় আমাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। যেকোন পরিস্থিতিতে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তারা বলছে, সার্বিক বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশী প্রবাসীদের সুরাক্ষা এবং  যারা ইউক্রেন ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে বর্তমানে ইউক্রেনে যে পরিস্থিতি ধারণ করেছে তাতে করে খুব বেশি আশা করতে পারছিনা। আমি যে শহরে বসবাস করছি এখানে অনেক বাংলাদেশী আছে এমনকি তাদের অনেকে পরিবার নিয়েও বসবাস করছেন। সবার মাঝেই একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু প্রবাসী নয় ইউক্রেন এর জনগনের মাঝেও ভয়াবহ যুদ্ধের আতঙ্ক বিরাজ করছে।


আমিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ইউক্রেনে অবস্থারত প্রবাসীদের সুরক্ষার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা ইউক্রেনে রয়েছেন তাদের সুরক্ষার কথা গুরত্ব দিয়ে বিবেচনা করে যেসব প্রবাসীরা দেশে ফিরে যেতে চায়, তাদের যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ হয়। এ ক্ষেত্রে দূতবাসগুলোকে আরও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানান আমিনা।


ইউক্রেনের মাইকোলাইভ সিটির স্থানীয় বাসিন্দা আলেনা গ্রিগোরিয়েভা আমাদের প্রতিনিধি সবুজ হোসেনকে বলেন, দেখুন রাশিয়া আমাদের উপর অন্যায্যভাবে হামলা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনের হতাহতের ঘটনা জানতে পেরেছি। আমাদের সন্মানিত প্রেসিডেন্ট ভেলাদিমির জেলেনস্কি আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধারন করতে বলেছেন। আমরা যদিও ভয় ও আতঙ্কের মাঝে রয়েছি কিন্তু প্রেসিডেন্ট আমাদের মনে সাহস রাখতে বলছেন।


গ্রিগোরিয়েভা আরো বলেন, আমাদের দেশের জনগন বা প্রেসিডেন্ট কখনোই যুদ্ধের পক্ষে নয়, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। ইউক্রেনজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যাবো। ইউক্রেন আবার ঘুড়ে দাঁড়াবে , ইউক্রেন আমাদের গৌরব। তবে আমরা হতাশা অনুভব করছি যে জাতিসংঘ এখনও কেন সঠিক উদ্যোগ নিচ্ছেনা রাশিয়ার বিরুদ্ধে।


উল্লেখ্য, ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে নিয়মিত টহলে রাখা হয়েছে। চালানো হচ্ছে থেমে থেমে সামরিক হামলা।