দালালের মাধ্যমে স্পেনে প্রবেশ করতে গিয়ে ৪ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। মরক্কো থেকে ২৬ নভেম্বর প্লাস্টিকের নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মেলেইয়াতে প্রবেশের চেষ্টা করলে মাঝ সমুদ্রে তাদের সলিল সমাধি হয়। নৌকাডুবিতে তাদের দেহ ম্যালিইয়া দ্বীপে ভেসে উঠলে, স্থানীয় পুলিশ দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে ম্যালিনা হাসপাতালে নিলে রাতেই সেখানে তারা মারা যান বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় পুলিশ গুরুতর আহত আরও ৫৯ জনকে দ্বীপ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
নৌকা ডুবিতে এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে, আহত এবং নিখোঁজ থাকা কারোরই নাম ঠিকানা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি ম্যানিলা কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের বাড়ি সিলেটে বলে জানা গেছে। স্পেন প্রবাসী মেহরাজ হাসান ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহতদের একজন ১৮ বছরের তরুণ। তার নাম আবু আশরাফ। শুক্রবার বিকালে তার পরিবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিহত আশরাফ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছিখুমরা গ্রামের আশিক মিয়ার পুত্র। এছাড়া একই নৌকায় থাকা অন্য তিনজন বাংলাদেশির মধ্যে দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন।
তাদের একজন হলেন, জাকির হোসেন, পিতা আপ্তাব উদ্দিন, গ্রামের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার সুড়িকান্দি গ্রাম এবং অপর নিখোঁজ তরুণের নাম জালাল উদ্দীন, তার গ্রামের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার পকুয়া গ্রামে। নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর দুই মাস আগে স্পেনে যাওয়ার উদ্দেশে এক দালালের মাধ্যমে প্রথমে তারা আলজেরিয়ায় যান। সেখান থেকে ২০ দিন আগে আফ্রিকার মরক্কোয় যান। পরে কয়েক দফায় দালালেরা তাদেরকে স্পেনে পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ সোমবার দালালদের সহায়তায় মরক্কোর নাদুর এলাকা থেকে নৌকায় সাগরপথে আশরাফসহ ৭৮ জন তরুণ স্পেনের ম্যানিলার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সমুদ্র পাড়ি দেয়ার আগে রোববার মৃতদের একজন, আশরাফ মোবাইলের অ্যাপ ইমুর মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা বলেন।
তখন আশরাফ পরিবারকে জানান, ৭৮ জনের একটি দল নৌকায় করে স্পেনের ম্যালিয়ায় উদ্দেশ্যে যাবে। আশরাফ পরিবারকে এটাও জানান যে, দালালরা বলেছে- নৌকায় বেশি দূরত্ব যেতে হবে না, নদী পার হওয়ার দূরত্ব সমান পথ পাড়ি দিতে হবে। যদিও বাস্তবে সেটা ছিল ভূমধ্যসাগরের জিব্রাল্টার চ্যানেল পাড়ি দেয়ার সমান। এরপর পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা আশরাফের খালাতো ভাই স্বজনদের জানান, আশরাফকে বহনকারী নৌকাটি সমুদ্রে ডুবে গেছে এবং আশরাফসহ ৪ বাংলাদেশি মারা গেছে। একাধিক সূত্র ও নিহতদের পরিবারসূত্রে জানা যায়, ভাগ্য বদলের জন্য ইউরোপে যাওয়ার আশায় দালাল চক্রের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে এবং টাকার বড় অংশ শোধও করে দেয়। এদের মধ্যে নিহত আশরাফ প্রায় এক বছর দুই মাস আগে স্পেনে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি ত্যাগ করে। স্পেন প্রবাসী মেহরাজ হাসান যিনি এক মাস পূর্বে মেহরাজ নিজেই দালালের মাধ্যমে মরক্কো হয়ে স্পেনে সাগর পথে প্রবেশ করেন।
তিনি জানান, এই মানব পাচার গ্রুপে তিনিও ছিলেন এবং সৌভাগ্যবশত একমাস পূর্বে তিনি জীবিত স্পেনে প্রবেশ করতে পেরেছেন। তিনি জানান, নৌকা ডুবিতে বেশির ভাগই বড়লেখা বিয়ানীবাজারের। তিনি আরও বলেন দালালরা তাদেরকে প্রথমে বিমান যোগে মরক্কো থেকে স্পেন পাঠানোর কথা বলে নিয়ে আসে। তারপর নৌকা দিয়ে সাগর পথে পাড়ি দিতে বলে, সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রতিবাদ করলেও দালালরা তাদেরকে বলে এটা সাগর নয় ছোট একটি খাল। এটি পাড়ি দিলেই স্পেন। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসা মেহরাজ হাসান বলেন, আমাদেরকে এভাবেই ব্ল্যাকমেইল করে দালাল চক্র।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।