ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের ওপর হামলার পর এবার ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ ‘গায়েব’ হয়ে গেছে। কে বা কারা ফুটেজগুলো গায়েব করল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই কর্তৃপক্ষের।
ডাকসু ভবনের বাইরে এবং ভেতরে মিলিয়ে মোট নয়টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ক্যামেরার ফুটেজগুলো ধারণ করা হতো ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদের কক্ষে। সেই কক্ষে একটি মনিটর এবং একটি সিপিইউ ছিল। কিন্তু ডাকসু ভবনে নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনার পর সেই মনিটর এবং সিপিইউয়ের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গতকাল দুপুরে যখন ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুলের ওপর হামলা হয়, তখন তিনি বিষয়টি জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানীর কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রক্টর অফিসের একজন কর্মকর্তা তাকে জানান, ডাকসুর প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসাইন এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজীত চন্দ্র দাসকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়ে তারা ডাকসু ভবনের গেট খুলতে বলেন। কিছুক্ষণ পর গেট খুলে দিলে কিছু অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে তারা ভবনের ভেতরে ঢোকেন।’
আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, দুই পক্ষ যখন দোতলায় মুখোমুখি অবস্থান করছিল, তখন তিনি আবার প্রক্টরের কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানান। প্রক্টর জানান, বিষয়টি তিনি দেখছেন। এরপর প্রক্টরের কার্যালয় থেকে বের হয়ে পরিস্থিতি জানানোর জন্য তিনি ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। তাকে কার্যালয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে চেষ্টা করেন। কিন্তু শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ফোন ধরেননি। এরপর তিনি নিজের কক্ষে এসে দেখেন, তার কক্ষের তালা ভাঙা এবং ভেতরে মনিটর ও সিপিইউ নেই। কে বা কারা সেগুলো নিয়ে গেছে, তা তিনি জানেন না।
গতকাল রোববার দুপুরে ডাকসু ভবনের নিজ কক্ষে নুরুলের ওপর হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কয়েকজন ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা তুহিন ফারাবীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ সোমবার তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে আসা হয়।
ঘটনার সময় হামলাকারীরা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। সুহেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সুহেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কয়েক দফা মারধরের শিকার হন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারাবী। এ ছাড়া হামলায় আহত নুরুলের ভাই আমিনুর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই দফায় নুরুল হক ও তার সহযোগীদের রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ডাকসু ভবনে ঢুকে তাদের পেটান। এরপর সনজীত ও সাদ্দাম ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারধর করা হয়। এ সময় ডাকসু ভবনেও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।