রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১লা জানুয়ারী ২০১৯ ১২:১৮ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা

একাদশ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে দু-এক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার রাতে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এই বৈঠক হয়। রাত ৭টা থেকে দুই ঘণ্টার বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে সাতজন ধানের শীষে বিজয়ী হয়েছেন তাঁদের শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব আমরা যথাসময়ে।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সময়  বলেন, ‘আগেই বলেছি, এই গোটা নির্বাচনই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।’ এর আগে সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফখরুল বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা প্রমাণ হয়ে গেছে। এই সরকার ইসির সঙ্গে যোগসাজশ করে এমন একটা নির্বাচন করল, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা। নতুন ভোটাররা এবার সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন।’

ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীরা শপথ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ফল প্রত্যাখ্যান করেছি। তবে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলন চলবে। এ ছাড়া অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’ এদিকে জোটের বৈঠকের পর ড. কামাল বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কল্পিত নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এ নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আজকের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ কবে নাগাদ এই কর্মসূচি হবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই হবে।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের নামে যে প্রহসনমূলক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে তা সারা দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং হাড়ে হাড়ে তা উপলব্ধি করছে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তা এ দেশের মানুষসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই কথিত নির্বাচন আওয়ামী দলীয় সরকারকে বিজয়ী দেখালেও প্রকারান্তরে হেরেছে বাংলাদেশ ও তার ১৭ কোটি মানুষ। এর মধ্য দিয়ে কবর রচিত হয়েছে আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র।’ ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ফ্রন্টের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী দলগুলো যারা সরকারের বিরুদ্ধে ছিল তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন—গণমাধ্যমকর্মীরা এমন তথ্য তুলে ধরলে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবচেয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। প্রথম থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আমরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলাম। তিনি একজন দলীয় ব্যক্তি। তাঁর সমস্ত কার্যকলাপ ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে।’ বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ‘সময়মতো’ জানানো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেব। এ জন্য জোটের সঙ্গে আলাপ করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করব।’ ফখরুল বলেন, ‘উনি (সিইসি) বলেছেন, বিএনপির এজেন্ট না এলে তিনি কী করবেন? আরে এজেন্ট না আসতে দিলে আমরা (বিএনপি) কী করব? এজেন্টকে তো আপনারা আসতেই দেননি। এই সরকার তার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রেই যেতে দেয়নি।’

ভোটের পর বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনরা সহিংসতা চালাচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সহিংসতা হয়েছে, নির্বাচনের দিন হয়েছে। এখন ভোটের পরও সহিংসতা শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জোটের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেছেন এত গ্রেপ্তার-হামলার পরও আমরা নির্বাচনে কেন গেলাম? তখনো বলেছি, এখনো স্পষ্ট করে বলছি, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচন করে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিকেল ৪টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর হয় সংবাদ সম্মেলন। এরপর ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান।