সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দলটি ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইন’-এর ব্যানারে সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য ইসলামী ফ্রন্টের প্যাডে আবেদন করা হলেও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় তা স্থগিত করা হয়। এরপর বিকল্প হিসেবে সায়েদাবাদে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে এবং সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা ঢাকা পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মাজার ও দরবারের নাম ব্যবহার করে সমাবেশের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে চাইছেন। এর মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের নেতারা তাদের সহায়তা করছেন, যা গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য ‘নিবন্ধিত’ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি তুলেছে ইসলামী ফ্রন্ট। যদিও তারা সমাবেশে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছে, তবুও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম পেজে এই সমাবেশের প্রচার চালানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ এই ধরনের সমাবেশে বিশেষ নজর রাখবে এবং যেকোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। তবে, মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইন-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও তারা মৌখিকভাবে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের আয়োজন করছে এবং সেখানে ৫০ হাজারের মতো লোকের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, এই সমাবেশের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সংগঠনের মিডিয়া সেলের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত এবং বিশুদ্ধভাবে জনগণের স্বার্থে হবে।
তবে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে যে, ইসলামী ফ্রন্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত এবং তারা নানা নামে বেনামে এই ধরনের সমাবেশ আয়োজন করছে। চট্টগ্রামের ইসলামিক পণ্ডিতদের মতে, আওয়ামী লীগ এবং ইসলামী ফ্রন্টের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং তারা বিভিন্ন মাজার ও দরবারের মাধ্যমে দলটির পুনর্বাসন করতে চাইছেন।
এদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে যেন ফিলিস্তিন ইস্যুতে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মাঠে নামতে না পারে।
সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সরকারের মনোভাব এখন আগের চেয়ে আরো কঠোর হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাবেশের সব দিক পর্যালোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, এই ধরনের সমাবেশ গড়ে তোলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। বিশেষত, এই ধরনের কর্মসূচি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে, তা হলো এই ধরনের সমাবেশগুলির রাজনৈতিক পরিণতি কি হতে পারে? এমন পরিস্থিতিতে সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে কোনো পক্ষের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার ক্ষতি না হয়।