কোকাকোলায় মিলল উচ্চমাত্রার রাসায়নিক, বাজার থেকে প্রত্যাহার !

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
কোকাকোলায় মিলল উচ্চমাত্রার রাসায়নিক, বাজার থেকে প্রত্যাহার !

কোকাকোলা, যা বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ড, সম্প্রতি এক বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। জনপ্রিয় এই পানীয়তে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ক্লোরেট পাওয়ার খবর বেরিয়ে আসার পর, ইউরোপের কয়েকটি দেশ এটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কোকাকোলার মতো বড় একটি কোম্পানি এই ধরনের অবাঞ্ছিত উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর, বিশ্বব্যাপী এর বিপণন ও বিক্রয় কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 


ইউরোপের কয়েকটি দেশ, যেমন বেলজিয়াম, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ ও নেদারল্যান্ডসে কোকাকোলার কিছু পণ্যতে উচ্চমাত্রার ক্লোরেট উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা শীতল পানীয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোকাকোলা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে এই দেশগুলোতে কোক, ফ্যান্টা, স্প্রাইট, ট্রপিকো ও মিনিট মেইড ব্র্যান্ডের ক্যান এবং বোতলে এই রাসায়নিকটি ছিল। 


এদিকে, কোকাকোলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা ইতোমধ্যে ৫টি পণ্য লাইন ব্রিটেনে পাঠিয়েছে এবং সেগুলি বিক্রি হয়ে গেছে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে কী পরিমাণ ক্যান বা বোতল প্রত্যাহার করা হয়েছে তা জানানো হয়নি, তবে বাজারে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কোকাকোলার প্রতি জনসাধারণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং এটি কোম্পানির জন্য বিপদের সংকেত হতে পারে। 


ক্লোরেট সাধারণত পানি শোধন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত ক্লোরিনভিত্তিক জীবাণুনাশক থেকে উৎপন্ন হয়। যদিও কোকাকোলার ফরাসি শাখা তাদের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেছে যে, এই মাত্রায় ক্লোরেটের উপস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। 


কোকাকোলা ব্র্যান্ডের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিপুল অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে, এই ধরনের একটি কেলেঙ্কারি তার বিশ্বব্যাপী বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কোকাকোলা বিশ্বের সেলিব্রিটিদের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে বিপণন বাড়ায়, কিন্তু এই ধরনের ঘটনার পর তার বিপণন কৌশলকেও পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। 


এই বিপর্যয়ের পর, কোকাকোলার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তারা পুরোপুরি তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবে এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, কোকাকোলার মতো বড় একটি কোম্পানি কীভাবে এত বড় একটি ত্রুটি ঘটতে দেয়? এবং গ্রাহকদের প্রতি তার দায়িত্ব কিভাবে পালিত হচ্ছে?


এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (EFSA) ২০১৫ সালে ক্লোরেট সম্পর্কিত একটি গবেষণা চালিয়েছিল, যেখানে তারা জানিয়েছিল যে, খাবার বা পানীয় প্রস্তুতে ক্লোরেটের সীমিত ব্যবহার কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে, গ্রাহকদের স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।


এই ঘটনায় কোকাকোলার প্রতি গ্রাহকদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে কোকাকোলার পণ্যগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার কারণে, কোম্পানির উপর চাপ বাড়ছে। এর ফলে কোকাকোলার মার্কেট শেয়ার এবং বিক্রয়ও অনেকটা কমে যেতে পারে। কোম্পানির প্রোডাক্ট লাইনের মধ্যে কোক, স্প্রাইট, ফ্যান্টা এবং মিনিট মেইডের মতো পানীয় রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ক্লোরেটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। 


এখন প্রশ্ন হলো, কোকাকোলা এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে এবং গ্রাহকদের পুনরায় আস্থা অর্জন করতে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? এ ঘটনা কোকাকোলার জন্য একটি বড় শিক্ষা হতে পারে, যেখানে খাদ্য এবং পানীয়ের মান বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। 


অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী কোকাকোলার বিপণনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে, যেখানে কোম্পানিকে তার পণ্যগুলোর মান এবং নিরাপত্তার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যে সব পণ্য বাজারে ইতোমধ্যে চলে গেছে, সেগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর পর তাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা অবশ্যই লক্ষ্য করা হবে। 


পরিশেষে, এই ঘটনার পর কোকাকোলা কতটুকু সক্ষম হবে নিজেদের সুনাম পুনরুদ্ধার করতে, তা পুরোপুরি নির্ভর করবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর। যদিও তারা ইতোমধ্যে দাবি করেছে যে, এই ক্লোরেটের উপস্থিতি স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ নয়, তবে গ্রাহকদের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে তাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।