শ্রীমঙ্গলে জালে আটকে পড়া দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলে জালে আটকে পড়া দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন হস্তান্তর

শ্রীমঙ্গলে একটি পুকুর পাড়ের জালে আটকে পড়েছিল একটি বিশাল দাঁড়াশ সাপ। ২৫ জানুয়ারি শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাত ফুট লম্বা এই সাপটি উপজেলার নোয়াগাঁও আখতাপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার পুকুর পাড়ের জালে আটকা পড়ে। এর পরপরই খবর পেয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজলসহ তার সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘন্টা চেষ্টার পর সাপটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, শফিক মিয়া নামে এক ব্যক্তি ফোন করে তাকে জানান যে, বিশাল আকৃতির একটি সাপ সুরুজ মিয়ার পুকুর পাড়ের জালে আটকে পড়েছে এবং স্থানীয়রা সাপটি মারার পরিকল্পনা করছে। তিনি আরও জানান, গ্রামবাসীরা সাপটিকে বিষধর ভেবে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এরপর তিনি তার সহকর্মী রাজদীপ দেবের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং এক ঘন্টা চেষ্টা করে সাপটিকে উদ্ধার করেন। 


সাপটির লম্বা ছিল প্রায় সাত ফুট, যা একটি সাধারণ দাঁড়াশ সাপের দৈর্ঘ্য। সজল জানান, উদ্ধার হওয়া সাপটিকে নিরাপদ অবস্থায় বন বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দাঁড়াশ সাপ একটি সংরক্ষিত প্রাণী, যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী হত্যার বা ক্ষতি করার অপরাধ। 


এ ঘটনাটি স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে একটি সচেতনতা সৃষ্টি করেছে, কারণ অনেকেই সাপটিকে বিষধর মনে করে অযথা হত্যা করার পথে হাঁটেন। কিন্তু দাঁড়াশ সাপটি প্রকৃতপক্ষে কৃষকের জন্য উপকারী একটি প্রাণী, যা ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ, ছোট কচ্ছপ ইত্যাদি খেয়ে পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি কৃষি কাজে সহায়ক প্রাণী হিসেবে পরিচিত। 


প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁড়াশ সাপের প্রধান খাদ্য হলো ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ এবং ছোট কচ্ছপ। এরা অত্যন্ত দক্ষভাবে গাছে উঠতে পারে এবং দ্রুত দৌড়াতে সক্ষম। একে কৃষকের বন্ধু বলা হয়, কারণ এটি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে সাহায্য করে। 


দাঁড়াশ সাপের মধ্যে পুরুষ সাপগুলো একে অপরের সঙ্গে লড়াই করলে তাদের দেহ একে অপরকে পেঁচিয়ে ঊর্ধ্বমুখী উঠতে থাকে, যার ফলে একটি দারুণ দৃশ্য সৃষ্টি হয়। এই দৃশ্যটি সাপের যুদ্ধ নাচ হিসেবে পরিচিত, যা প্রকৃতির এক অদ্ভুত এবং দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শন। 


এছাড়া, এ সাপটির একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এর ক্ষিপ্রতা এবং প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকার ক্ষমতা। দাঁড়াশ সাপ সাধারণত জঙ্গলে বা কৃষি জমিতে বাস করে এবং এদের খাবারের জন্য অন্য ছোট প্রাণী ও পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে সাপটি কৃষকদের জন্য অমূল্য সহায়ক হিসেবে পরিচিত। 


এই ঘটনা সমাজে আরও একটি বার্তা নিয়ে এসেছে। সাপ, বিশেষত দাঁড়াশ সাপ, মানুষ এবং পরিবেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সঠিক পরিচর্যা করা উচিত, যাতে তারা প্রকৃতির সুষম ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। যেহেতু সাপ সংরক্ষিত প্রাণী, তাই এগুলোর প্রতি অবহেলা বা আক্রমণ করা দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। 


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সঠিক ধারণা সৃষ্টি করা সম্ভব। এমন ঘটনাগুলির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষদের বন্যপ্রাণীর প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি। 


অতএব, যারা সাপ দেখলে আতঙ্কিত হয়ে তাদের হত্যা করার চেষ্টা করেন, তাদের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে এই ঘটনা। সাপ হত্যার পরিবর্তে, এর গুরুত্ব এবং প্রকৃতিতে এর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত। 


এ ঘটনায় বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য পরিবেশকর্মীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তা প্রশংসনীয়। তারা শুধুমাত্র সাপটিকে উদ্ধার করেননি, বরং এটি একটি বৃহত্তর সচেতনতার দিকেও ইঙ্গিত দেয় যে, বন্যপ্রাণীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং সহানুভূতির গুরুত্ব।