কাল আ.লীগের ‘সমাবেশ’ এবং বিএনপির ‘মহাসমাবেশ’ ঘিরে উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২৬শে জুলাই ২০২৩ ০৭:৪৭ অপরাহ্ন
কাল আ.লীগের ‘সমাবেশ’ এবং বিএনপির ‘মহাসমাবেশ’ ঘিরে উদ্বেগ

একই দিনে ও কাছাকাছি সময়ে রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘সমাবেশ’ এবং বিএনপির ‘মহাসমাবেশ’ ঘিরে দেশ জুড়ে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় দুই দলের এই শোডাউনকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানামুখী শঙ্কাও।


শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই নয়, একই দিনে রাজধানীর আরও অন্তত ১০টি স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির মিত্র দল—জোটসমূহ। বিএনপির মিত্র জোট ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চ এদিন পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করবে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ড. কর্নেল অলি আহমদের (অব.) এলডিপি, মোস্তফা মোহসীন মন্টু-সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ অন্যান্য মিত্র দলও পৃথকভাবে সমাবেশ করবে। চরমোনাই পিরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও (আইএবি) আগামীকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এদিন সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছে। একই দিনে রাজধানীতে এতগুলো সমাবেশ ও মহাসমাবেশ করার ঘোষণায় একদিকে যেমন তীব্র যানজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তেমনি শঙ্কা রয়েছে সংঘাত-সহিংসতারও।


গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবদল-ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে বিএনপি।           


সেই সমাবেশ থেকে আগামীকাল মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে ও সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলন ঘোষণার পর এটিই বিএনপির প্রথম মহাসমাবেশ।


শনিবার বিএনপি যখন মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে, ঐদিন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সমাবেশ ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। ঐ সমাবেশ থেকে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল সোমবার। পরে সেদিনই রাতে জানানো হয়, সমাবেশ হবে বৃহস্পতিবার। যুবলীগ-ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে আগামীকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এতে ঢাকা মহানগর ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার তিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেবেন।


জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংঘাতের আশঙ্কা নেই। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। তবে কেউ আঘাত করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।


তবে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, একই দিনে পালটা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ উসকানি দিচ্ছে, তারা দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। কোনো ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটলে সেটির দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই নিতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন ফখরুল।


জানা গেছে, বাধার আশঙ্কায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আগে-ভাগে ঢাকায় আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলনের প্রথম এই মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির, এখনই রাজপথে টানা অবস্থানের চিন্তা-ভাবনা নেই। তবে মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


গত বছর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের সময় মালিক-শ্রমিকদের ‘ধর্মঘটে’ গণপরিবহন বন্ধ হয়। দলটির নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, মহাসমাবেশে জমায়েত ঠেকাতে এবারও যানবাহন বন্ধ করা হতে পারে। স্থানীয় পরিবহন নেতারা ভাঙচুরের আশঙ্কা দেখিয়ে গণপরিবহন বন্ধের ইঙ্গিত দিলেও কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, গণপরিবহন চলবে।


মহাসমাবেশ সফল করতে সোমবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা, বিভাগীয় ও বৃহত্তর ঢাকার নেতারা যৌথসভা করেছেন। মেডিক্যাল টিম, শৃঙ্খলা কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, মঞ্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জমায়েত করার সিদ্ধান্ত হয়। পরিবহন বন্ধ হলে, ঢাকার প্রবেশপথে বাধা থাকলে, হামলা হলে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে—সেসব বিষয়েও যৌথসভায় আলোচনা হয়। দলের সব শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আগ বাড়িয়ে সংঘাতে জড়ানো যাবে না। যাতে সরকার চলমান আন্দোলনকে সহিংস কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে দেশে-বিদেশে সুযোগ নিতে না পারে।


আগামীকালের মহাসমাবেশ থেকে রাজপথে টানা অবস্থানের চিন্তা-ভাবনা নেই, বিএনপির পক্ষ থেকে এমনটি বলা হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের শঙ্কা-রাস্তায় বসে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে ঢাকা ‘অচল’ করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে বিএনপি। তাদের মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় সমাবেশ করার চার দিন পরই রাজধানীতে আরেকটি মহাসমাবেশ ডাকার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বিএনপির।


আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কারও কারও মতে, সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ানো এবং বিদেশিদের কাছে জনসমর্থন দেখানো—বিএনপির এই মহাসমাবেশের লক্ষ্য হতে পারে। আবার কারও কারও ধারণা, বিএনপি সুযোগ পেলে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করতে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে আওয়ামী লীগও পালটা সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই চিন্তা থেকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই পালটা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে আওয়ামী লীগ।