বিএনপির পদত্যাগ করা সংসদীয় আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়ের গেজেট হাতে পেলেই উপ-নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন।
আজ রোববার স্পিকারের কাছে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগপত্র জমা দেন। ৭ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ জন সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং বাকি ২ জন ইমেইলের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, একজনের পদত্যাগ পত্রে তার স্বাক্ষর স্ক্যান করা থাকায় তা গ্রহণ করা হয়নি। তাকে আবার পদত্যাগ পত্র জমা দিতে হবে।
সংবিধানের বিধান মতে কোনো সংসদ সদস্যের নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পদত্যাগপত্র স্পিকার পেলেই ওই আসন শূন্য হবে।
সংবিধানের ১৭৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হলে সংসদ সচিবালয়ের সচিব তার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। যাতে ইসি শূন্য পদটি পূরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
শনিবার গোলাপবাগে পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন আজ সকালে ১১টার পরে সংসদের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্য যান বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী আলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, 'আমরা ৫ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। বাকি ২ জন পরে এসে জমা দেবেন। আমরা যে ৫জন পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি তাদের এই মুহূর্ত থেকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়ে গেল। আমরা এখন থেকে আর সংসদ সদস্য নই। স্পিকার গ্রহণ করেছেন। বাদ বাকি ব্যবস্থা উনি জাতিকে, গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেবেন।'
দলের কৌশলগত সিদ্ধান্তে বিএনপি সংসদে এসেছিল বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা যা কিছু করলাম বা করেছি সবই দলের সিদ্ধান্ত। আমরা লাখ লাখ মানুষের সামনে আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। একদিন আগেও কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমরা এক বছর একমাস আগে ছেড়ে দিয়েছি স্বইচ্ছায়।'
স্পিকারের ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশংসা করেন তিনি বলেন, 'স্পিকারের ভদ্রতা, শিক্ষা, শালীনতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। এই রকম একজন মানুষের কাছে পদত্যাগপত্র দিতে পেরেছি। আমাদের ভালোই লাগলো। আমরা চা-কফি খেলাম, আপেল, কাজু বাদাম ও সন্দেশ খেয়েছি। গল্পগুজব করলাম।'
স্পিকার আপনাদের পদত্যাগ না কারার জন্য কোনো ধরণের অনুরোধ করেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজ বলেন, 'আমরা সম্মানের সঙ্গে অনেক হাসিমুখে গল্পসল্প করে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি। দেওয়ার সময় কবি'র ওই লাইনটি বলেছিলাম, "আবার আসিব ফিরে"।'
রুমিন ফারহানা বলেন, 'আমাদের ২ পক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, ব্যক্তিগত আলাপ করেছি। সাড়ে ৩ বছর একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক স্মৃতিচারণ হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কারও যাবার প্রয়োজন নেই। তাই স্পিকার অনুরোধ করেননি।'
পদত্যাগপত্রে যা আছে:
যে কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে পদত্যাগপত্র পড়ে শোনার রুমিন ফারহানা।
পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর দমনপীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ, সর্বপরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, 'জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণকারী এই সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে অন্যের বিনাপ্ররোচণায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর অদ্য ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সংসদ থেকে যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।
স্পিকার বলেন, 'সংশ্লিষ্ট আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এরপর সংশ্লিষ্ট সদস্যদেরও পাঠাবো হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। যখন অধিবেশনে বসবে সেখানেও তা জানানো হবে।'
বিএনপি'র সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ জনিত কারণে শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়ের গেজেট পাওয়ার পরে শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সচিবালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার পরেই ইসির কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, আসন শূন্য সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন পেলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। যে দিন পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশন হবে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই সব আসনে উপ-নির্বাচন হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, পদত্যাগ জনিত কারণে হোক আর যে কোনো কারণেই হোক জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে সেখানে উপ-নির্বাচন হবে।
তার মতে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে কোন সংসদীয় আসন শূন্য হলে উপ-নির্বাচন করতে হবে। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ এখনও এক বছরের বেশি রয়েছে। কাজেই এখন কোনো আসন শূন্য হলে নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী উপ নির্বাচন করতেই হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।